আলোচিত ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের দায়ের করা মামলায় নায়িকা পরীমনির সর্বোচ্চ ৩ বছরের সাজা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম মো. সোহেল।
মারধর,ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩২৩ ও ৫০৬ নম্বর ধারায় চার্জগঠন বা অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ অপরাধ প্রমণিত হলে নায়িকার সর্বোচ্চ তিন বছরের সাজা হতে পারে।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম মো. সোহেল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘পরীমনির বিরুদ্ধে ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় চার্জগঠন করা হয়েছে। এ দুটি ধারার অভিযোগ আদালতে প্রমাণ করতে পারলে সর্বোচ্চ তিন বছরের সাজা হবে। এর মধ্যে ৩২৩ ধারার সেচ্ছায় আঘাত করার বিষয়টি প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১ বছর আর অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন প্রমাণিত করতে পারলে সর্বোচ্চ ২ বছরের সাজা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আদালত চাইলে কিছু কম শাস্তি দিতে পারে। আমরা চাইবো সর্বোচ্চ শাস্তি যেন হয়।’
এদিন ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনাইদের আদালতে পরিমণির আইনজীবী সময় আবেদন করেন। আদালত নামঞ্জুর করে চার্জগঠনের আদেশ দেন। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আগামী ২০ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
পরিমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত (সুরভী) বলেন, ‘এদিন মামলাটি চার্জ শুনানির জন্য ছিল। অসুস্থ থাকায় পরীমণি আদালতে হাজির হতে পারেননি। অপর আসামি জিমির পক্ষেও সময় আবেদন করা হয়। আদালত সময় আবেদন নামঞ্জুর করেন। তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেন।
২০২২ সালের ৬ জুলাই আদালতে মামলাটি করেন নাসির উদ্দিন। গত বছরের ১৮ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলার পরিদর্শক মো. মনির হোসেন ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পরীমণি ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাদের বিরুদ্ধে মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ১৮ এপ্রিল ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম সাইফুল ইসলামের আদালত দুই আসামিকে ২৫ জুন আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। ওই দিন আত্মসমর্পণ করে জামিন পান তারা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, পরীমনি ও তার সহযোগীরা অ্যালকোহলসেবী। সুযোগ বুঝে তারা বিভিন্ন নামিদামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন না। পরীমণি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করে হয়রানির ভয় দেখান। ২০২১ সালের ৯ জুন রাত ১২টার পর আসামিরা সাভারের বোট ক্লাবে ঢুকে দ্বিতীয় তলার ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে তারা ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন।
বাদী ও তার সহযোগী শাহ শহিদুল আলম রাত সোয়া ১টার দিকে যখন ক্লাব ত্যাগ করছিলেন, তখন পরীমণি উদ্দেশমূলকভাবে বাদী নাসির উদ্দিনকে ডাক দেন এবং তাদের সঙ্গে কিছু সময় বসার অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে পরীমণি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নাসির উদ্দিনকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন এবং একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনামূল্যে পার্সেল দিতে চাপ দেন। বাদী এতে রাজি না হওয়ায় পরীমণি তাকে গালি দেন। বাদানুবাদের একপর্যায়ে পরীমণি বাদীর দিকে একটি সারভিং গ্লাস এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিও ছুড়ে মারেন। এতে নাসির উদ্দিন মাথায় এবং বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরীমণি ও তার সহযোগীরা নাসির উদ্দিনকে মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন ও ভাঙচুর করেছেন।
এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরীমনি সাভার থানায় বাদীসহ দুই জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।