কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন একুশে পদকজয়ী অভিনেতা ও নাট্যকার মাসুম আজিজ। তার মরদেহে সামাজিক, রাজনৈতি, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এসময় সবাই মাসুম আজিজের স্মৃতিচারণ করেন। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে মরদেহ গ্রামের বাড়ি পাবনার উদ্দেশে নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে দাফন করা হবে।
মঙ্গলবার (১৮) বেলা ১১ থেকে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী এই অভিনেতার মরদেহ।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাবেক মন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “আমি তাকে কখনো মনোবল হারাতে দেখিনি। অঙ্গীকারবদ্ধ নাট্যকর্মী যারা, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।”
অভিনেত্রী দিলারা জামান বলেন, “মাসুম ভাই অত্যন্ত কাজপাগল মানুষ ছিলেন। বড় অসময়ে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।”
বাবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাসুম আজিজের ছেলে উৎস বলেন, “বাবার সংগ্রামী জীবনের প্রভাব আমাদের ওপর পড়তে দেননি। অনেক দৃঢ়চেতা মানুষ ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আমাকে বলতেন, সুস্থ হয়ে যাবেন। আমরা আমাদের এই অভিভাবককে হারিয়ে ফেললাম।”
মাসুম আজিজ ছিলেন একাধারে অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে তিনি চার দশকের বেশি সময় ধরে নিয়মিত অভিনয় করেছেন। হুমায়ূন আহমেদ থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের অনেক নির্মাতার নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করে পেয়েছেন জনপ্রিয়তা।
‘ঘানি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে রাইসুল ইসলাম আসাদের সঙ্গে যৌথভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মাসুম আজিজ। গহীনে শব্দ, এই তো প্রেম, গাড়িওয়ালাসহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সনাতন গল্প’ পরিচালনা করেছেন তিনি। সিনেমাটি ২০১৮ সালে মুক্তি পায়। চলতি বছরে মাসুম আজিজকে একুশে পদক দেয় সরকার।
দেশবরেণ্য খ্যাতিমান এ অভিনেতা ও নাট্যকার বেশ কয়েক বছর ধরে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু গত জানুয়ারিতে তার এই রোগ ধরা পড়ে। এরপর কেমোথেরাপি ও রেডিও থেরাপি নিচ্ছিলেন তিনি। এর মধ্যে হঠাৎই শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে গত সপ্তাহে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। ক্যানসার ও হৃদরোগে আক্রান্ত এই গুণী শিল্পী লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৭ অক্টোবর) শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।