চলচ্চিত্র অঙ্গনে তারকাদের বিয়ে বেশ জাঁকজমকভাবেই হয়ে থাকে। তবে অনেক তারকা অভিনেত্রী বিয়ের পরে আর অভিনয় করতে চান না। কারও থাকে সংসারে প্রাধান্য, কেউবা ফিল্মি দুনিয়ার মায়া ছাড়তে পারেন না।
তেমনি ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পূজা চেরি জানিয়েছেন, বিয়ের পর আর অভিনয় করবেন না। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটা জানান তিনি।
পূজা চেরি বলেন, ‘‘আমি বিয়ের ব্যাপারে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। আমার বাবা-মা যেহেতু আমার অভিভাবক, সুতরাং বিয়ের বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।”
তবে বিয়ের জন্য মিডিয়ার কাউকে পছন্দ নয় পূজার। তিনি চান মিডিয়ার বাইরেই কাউকে বিয়ে করতে। অভিনেত্রী বলেন, “আমি সব সময় বলেছি, মিডিয়ার কোনো মানুষকে বিয়ে করব না। বিয়ের আগ পর্যন্ত চুটিয়ে কাজ করতে চাই। কারণ, এখনই আমি বিয়ে করব না। যখন বিয়ে করার সময় হবে, তখন বিয়ে করে সিনেমাকে বিদায় জানাব।”
শুধু পূজা চেরি নন, ঢালিউডের দর্শকের মন জয় করা অভিনেত্রী মৌসুমী। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে দিলীপ সোমের ‘দোলা’ চলচ্চিত্রে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে প্রণয়ের দোলা লাগে ওমর সানী ও মৌসুমীর হৃদয়ে। ১৯৯৫ সালের ৪ মার্চ হুট করেই বিয়ে সেরেছিলেন তারা; পরবর্তী সময়ে বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। ‘রিল লাইফের’ তারকা জুটি ‘রিয়েল লাইফে’ গাঁটছড়া বাঁধার পর এক ছাদের নিচে দুই যুগের বেশি সময় কাটিয়েছেন তারা। বিয়ের পর ঘর আলো করে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়েসন্তান হয়।
বিয়ের পর মৌসুমীকে আর সেভাবে সিনেমায় দেখা যায়নি। সিনেমায় অভিনয় করা কমিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড শোসহ, রেডিও এবং নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।
অন্যদিকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের অন্যতম সফল অভিনেত্রী শাবনূর। তিনি তার ক্যারিয়ারে অনেক ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। অর্জনের খাতাও দীর্ঘ তার। তিনি রেকর্ডসংখ্যক ১০ বার তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেছেন। সিনেমায় তারা দুষ্ট-মিষ্টি চাহনি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে বহুবার।
২০১২ সালে ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে শাবনূর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন ও নাগরিকত্ব লাভ করেন। এর ফলে বিয়ের পর তাকে আর বাংলা সিনেমায় দেখা যায়নি।
শুধু ঢালিপাড়ায় নয়, একসময় ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বড় নাম ছিলেন, কিন্তু বিয়ের পরই অভিনয় জগৎ থেকে ক্রমেই দূরে সরে যান একাধিক বলিউড অভিনেত্রী।
বলিউডে ‘রঙ্গিলা গার্ল’ নামে পরিচিত অভিনেত্রী উর্মিলা মার্তন্ডকার। ২০১৬ সালে কাশ্মীরের ব্যবসায়ী ও মডেল মহসিন আখতার মীরকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর চলচ্চিত্রকে চিরতরে বিদায় জানিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। তবে আজকাল রাজনীতিতে সক্রিয় উর্মিলা।
অন্যদিকে ‘গজনি’ ছবি দিয়ে দর্শকদের হৃদয়ে আলাদা ছাপ রেখে গিয়েছেন অভিনেত্রী আসিন। ২০১৬ সালে মাইক্রোম্যাক্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা রাহুল শর্মাকে বিয়ে করেন অসিন। এরপর থেকেই বিবাহিত জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এই অভিনেত্রী। সিনেমার পর্দায় আর দেখা যায়নি তাকে।
২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যাকশন থ্রিলার ছবি ‘টারজান’ নায়িকা আয়েশা টাকিয়া। বর্তমানে অভিনয় জগৎ থেকে দূরে পরিবার সামলাচ্ছেন তিনি। ২০০৯ সালে ফারহান আজমিকে বিয়ে করেন আয়েশা টাকিয়া। তিনি বেশ কিছু সিনেমা করে দর্শক মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন তবে বিয়ের পরে এই জগৎ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।
সম্প্রতি আলোচনায় থাকা কাজল তার ক্যারিয়ারে বলিউডকে উপহার দিয়েছেন অনেক সফল সিনেমা। অনেকের ভালোবাসা অর্জন করেন কাজল। ১৯৯৪ সালে ‘গুন্ডারাজ’ চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণকালে কাজল ও তার সহশিল্পী অজয় দেবগনের প্রেমের সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে। ১৯৯৯ সালে দেবগনের বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী মহারাষ্ট্রীয় পদ্ধতিতে এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা।
তাদের বিবাহও গণমাধ্যমের ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়েছিল, গণমাধ্যমের অনেক সদস্যই কাজলের কর্মজীবনের শীর্ষে অবস্থানকালীন তার বিবাহের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। কাজল আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে তিনি চলচ্চিত্র ছাড়বেন না, কিন্তু কাজের পরিমাণ কমিয়ে দেবেন।
ক্যারিয়ারের শীর্ষে অবস্থানকালীন অনেকেই এমন সিনেমাবিমুখ হওয়ায় চলচ্চিত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, এতে করে গুণী শিল্পীদের হারায় ইন্ডাস্ট্রি। তাদের আহ্বান, নায়িকাদের বিয়ের পরে সংসার আর ক্যারিয়ার একই সঙ্গে সামাল দেওয়া বিষয়ে ভাবা।
বর্তমানে বেশির ভাগ বলিউড অভিনেত্রী বিয়ের পরেও সমানতালে ক্যারিয়ার সামলাচ্ছেন। দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিচ্ছে নিজেদের অভিনয় দিয়ে।