চলমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিয়ে উত্তাল দেশের শিক্ষাঙ্গন। এমন অবস্থায় কেউ কেউ বুয়েট শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আবার অনেকেই ছাত্ররাজনীতির ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে এবার নিজের অবস্থান পরিস্কার করেছেন সাবেক বুয়েটের চাত্রী ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপি করিম। তিনি জানিয়েছেন, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে তিনি।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে অপি করিম লিখেছেন, ‘বুয়েটের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং এলামনাই হিসেবে, আমি বুয়েটে সকল প্রকার ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে আমি একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং তাদের সফলতা কামনা করছি।’
হ্যাশট্যাগে তিনি লিখেছেন, ‘নো স্টুডেন্ট পলিটিক্স ইন বুয়েট’। অপি করিমের সেই স্ট্যাটাসে অনেকেই তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। আবার অনেকেই তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
এর আগে এক ফেসবুক পোস্টে বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী গবেষক, লেখক, সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও শিক্ষক চমক হাসান বলেছেন, আমি বুয়েটের অ্যালামনাইদের একজন হিসেবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, বুয়েটে ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ থাকা উচিত। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র শিবির- কিছুরই দরকার নাই।
তিনি লেখেন, কারণ দেখানো খুব সহজ। দুই কলামের একটা সারণি বানানো হোক। বামপাশে থাকুক ছাত্র-রাজনীতির উপস্থিতি বুয়েটে কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন উপহার দিয়েছে তার একটা তালিকা, আর ডানপাশে থাকুক ছাত্র-রাজনীতির উপস্থিতির কারণে কী কী যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে গেছে ছাত্র-শিক্ষক-প্রশাসন, তার একটা খতিয়ান। ডানপাশে আবরার, সনি এই নামগুলোর কোনো একটার যে ভার, সেটা বামপাশের সম্মিলিত ভারের চেয়েও বহুগুণে বেশি। এরপরেও ডানদিকের তালিকায় র্যাগিং, অত্যাচার, চাঁদাবাজি, ক্ষমতা প্রদর্শনী, অন্যায় সুবিধাভোগ – এসবের উপাখ্যান পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে যাওয়া যাবে। তাহলে ছাত্র-রাজনীতি কেন চাইবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা?
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডকে স্মরণ করে চমক হাসান বলেন, ডিপার্টমেন্টের প্রিয় জুনিয়র আবরারকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, মন থেকে সেই ক্ষত এখনও মুছে যায়নি। চেনা জুনিয়রদের সাথে যত আলাপ হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আবরার-হত্যার ঘটনার পর যখন ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়, তারপর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক শান্তিতে ছিল, আছে। কোনো যুক্তিতেই আবার ওই নরক ফিরিয়ে আনার মানে হয় না।
চমক হাসান আরও বলেন, ছাত্রলীগ না থাকলে শিবির মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এটাও মেনে নেওয়ার মতো যুক্তি না। সহজ কথা ছাত্র রাজনীতি নেই মানে কোনো সংগঠনেরই কার্যক্রম নেই। ছাত্রলীগও না, শিবিরও না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবাইকেই প্রতিহত করবে। গত কদিনে সবার সাহস আর ঐক্য দেখে তাদের প্রতি এই ভরসা আমার আছে।
সবশেষে চমক হাসান তার পোস্টে বলেন, একসঙ্গে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে, পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা যে ঐক্য দেখিয়েছে, সেটা অসাধারণ। মন থেকে ভালোবাসা আর টুপিখোলা সালাম! আমার পূর্ণ সমর্থন রইলো তোমাদের জন্য।