• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কেউ আমার প্রতিভা দেখতে চাইছে না, বলছে ‘ওইটা’ করতে পারবা কি না’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৪, ০৩:১৫ পিএম
কেউ আমার প্রতিভা দেখতে চাইছে না, বলছে ‘ওইটা’ করতে পারবা কি না’
অভিনেত্রী হিয়া রায়। ছবি: সংগৃহীত

কেউ আমার প্রতিভা দেখতে চাইছে না, বলছে ‘ওইটা’ করতে পারব কি না বলে মন্তব্য করেছেন ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ খ্যাত ভারতের  তরুণ অভিনেত্রী হিয়া রায়। সম্প্রতি ভারতের আনন্দবাজার অনলাইনে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন এই নায়িকা। সিরিজের জাহানারার চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন এই অভিনেত্রী।

একেবারে গ্রাম থেকে কলকাতায় স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন সাবালক হওয়ার আগেই। ইচ্ছে ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। কিন্তু মাত্র ১৯ বছরেই এমন সব অভিজ্ঞতা হলো যে থমকে যেতে বাধ্য হলেন নিজেই। কিন্তু থেমে গেলে চলবে কী করে! তাই একটা বিরতি নিয়ে ফের নতুন করে চেষ্টা করতে শুরু করলেন। তার পরই অনির্বাণ ভট্টাচার্যের ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ ছবিতে সুযোগ পেলেন। সেখানে ছোট্ট একটা চরিত্র পেলেন। আর তাতেই কেল্লাফতে। একেবারে নায়িকার চরিত্রে। ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ সিরিজ়ে জাহানারার চরিত্র। নায়িকা হিসাবে প্রথম কাজ, তাতেই পর্দায় সাহসিনী। চুম্বন থেকে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে কোনো ছুতমার্গ রাখেননি হিয়া রায়।

‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ মুক্তির পর বদলে যায় তার জীবন। এই নিয়ে হিয়া বলেন, ‘এক সময়ে ভাবতাম এসভিএফ কিংবা হইচইয়ের সামাজিক মাধ্যমের পাতায় কবে আমি নিজেকে দেখতে পাব। এখন সিরিজ়ের পোস্টারে নিজেকে দেখতে পাচ্ছি। ভাল লাগছে। লোকজন রাস্তায় চিনতে পেরে এগিয়ে আসছেন। বাবা-মাকে লোকজন জিজ্ঞেস করছে। তারা গর্ব অনুভব করছেন।

শুরুর দিকের কথা জানতে চাইলে এই তরুণ অভিনেত্রী বলেন, আমি মধ্যমগ্রামের মেয়ে। স্কুলের পড়াশোনা সেখানেই। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই সাধারণ ক্যামেরায় ছবি তুলে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করতাম। সেখান থেকে বেশ কিছু চিত্রগ্রাহকের আমার ছবি পছন্দ হয়। তখন কিন্তু টাকাপয়সা তেমন উপার্জন হত না। উচ্চ মাধ্যমিকের পর মডেলিং শুরু করি। কলেজ শেষ হল ২০২২ সালে। তার পর থেকে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে শুরু করলাম। স্কুলে পড়ার সময় থেকে অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে আমার। কিন্তু চাইলেই তো অভিনেত্রী হওয়া যায় না। আমার পরিবারের কেউ এই জগতের সঙ্গে যুক্ত নয়, তাই কোন রাস্তায় যে যাব সেটা পরিষ্কার করে বুঝতে পারছিলাম না। গোটাটাই ধোঁয়াশা ছিল আমার কাছে। কিন্তু মডেলিংয়ের প্রস্তাবটা পেতেই আর সাত-পাঁচ ভাবিনি। শুরু করে দিয়েছিলাম কাজ। সেখান থেকে প্রস্তাব আসতে শুরু করে।

নায়িকা হওয়ার চেষ্টায় কারো সাহায্যে পেয়েছিলেন এম প্রশ্নে হিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকে চাকরিজীবী পরিবারে বড় হয়ে ওঠা। বাবা আয়কর দফতরের আধিকারিক। তাই সেই ভাবে কারও সাহায্য পাইনি। যা করছি নিজের চেষ্টায়। এমনকি বাবার আপত্তিও ছিল। প্রথম দিকে মোটেও চাইতেন না এই পেশায় আসি। চাইতেন সরকারি চাকরি করি। প্রস্তুতির জন্য বিশেষ ক্লাসেও গিয়েছিলাম। এক মাস করেই চলে আসি, মন বসাতে পারিনি।

‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’-এর প্রস্তাবটা পেলেন? আমি ‘জাতিস্মর’ সিরিজ়ে একটা পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এ ছাড়াও এসভিএফের একটা ধারাবাহিক সদ্য শুরু করেছিলাম। তখন অডিশনের ডাক আসে। অনির্বাণদা ও অর্পণদার প্রথমে বারই ভাল লেগে যায়। আমাকে জাহানারার চরিত্রে বেছে নেন।

অভিনয় শেখা হয়েছিল এমন প্রশ্নে হিয়ার জবাব, আমি থিয়েটার করিনি, অভিনয়ের কোনো প্রথাগত শিক্ষা নেই। তাই সিরিজ়টা শুরু হওয়ার আগে প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলাম। তখনই অনির্বাণদা হাতে ধরে সবটা শিখিয়েছেন। চরিত্রটা কেমন, সে সব কিছু বুঝতে সাহায্য করছেন। অর্পণদা (পরিচালক) অনেক সাহায্য করেছেন। আর শুটিং চলাকালীনও অনির্বাণদার কথা শুনে চলেছি।

প্রথম লিডিং রোলে অনেকগুলো চুম্বনের দৃশ্য, অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ছিল, বাবা-মা দেখছেন, তাদের মন্তব্য কী, দিয়া বলেন, আসলে তারা দেখছেন আমি পরিচিতি পাচ্ছি। লোকে আমাকে চিনছে। তাই আগে যে চিন্তাভাবনা ছিল তাদের সেগুলো পরিবর্তন হচ্ছে।
বাংলা সিরিজ়ে বা সিনেমায় নায়িকাদের সচরাচর খোলামেলা দৃশ্যে খুব একটা দেখা যায় না, আপনি তা হলে একটু বেশিই সাহসী?  এই নায়িকা বলেনআমাদের সিরিজ়ে ভালবাসার উদ্‌যাপনটাই দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে অশ্লীলতা ছিল না। তাই চরিত্রের প্রয়োজনে আমরা তেমন দৃশ্যে অভিনয় করেছি। তবে সব কিছুরই একটা সীমা থাকে। আমার পরিচালক কখনও সেই সীমা অতিক্রম করতে বলেননি বলেই এত সহজে করতে পেরেছি।

সিরিজ়ে একটা আবেগঘন মুহূর্তে নায়কের সঙ্গে আপনাকে দেখা যায় অন্তর্বাস পরিহিতা অবস্থায়, এই নিয়ে তরুণ এই অভিনেত্রী বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই কর্মশালা চলেছে। তখনই দৃশ্যটা বোঝানো হয়েছিল আমাদের। কী ভাবে শুট করা হবে সেটা বোঝানো হয়। খুব টেকনিক্যালি শুটটা করা হয়। সেই কারণে মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম। আর আমার যে নায়ক সে-ও মধ্যমগ্রামের ছেলে। ওর সঙ্গে ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হত, আড্ডা হত। তাই ওই ইতস্তত বোধটা ছিল না।

নিজেকে ‘বোল্ড’ অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান কি না, এমন প্রশ্নে এই নায়িকা বলেন, আসলে ‘বোল্ড’ কথাটা অর্থ তো সাহসী। আর আমি নিজেকে সাহসী বলেই মনে করি। জাহানারা চরিত্রটা যেমন, আমি সেভাবেই নিজেকে পর্দায় তুলে ধরেছি।
অল্প বয়সে কাজ শুরু করেছেন, ইন্ডাস্ট্রিতে সব অভিজ্ঞতাই কি খুব মধুর ছিল? এবার নায়িকার সোজা জবাব, না একদম নয়, ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজানো রাস্তা পেয়েছি তেমনটা নয়। ২০১৯ সাল থেকে একটু একটু করে কাজ করছি। অডিশন দিতে আসতাম কলকাতায়, কখনো একা, কখনো মাকে নিয়ে আসতাম। আর টলিপাড়ায় এত ব্যাঙের ছাতার মতো প্রযোজনা সংস্থা আছে যা নবাগতদের বিভ্রান্ত করে। যাদের কিছু করার নেই, তারা তো বিশ্বাস করেন। এ সব জায়গা থেকে অনেক কুপ্রস্তাব পেয়েছি। আমাকে শুনতে হয়েছে, ‘‘মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরলে কাজ পাবে না। সবইকে আপস করতে হয়।’’ এমনও শুনেছি, ‘‘যত বড় অভিনেত্রী আছে সবাই এ ভাবেই বড় হয়েছে।’’ আমি তখন খুব ভেঙে পড়েছিলাম। কেউ আমার প্রতিভা দেখতে চাইছে না, বলছে ‘ওইটা’ করতে পারব কি না। 

পরে নতুন করে শুরু করলে কবে থেকে? মাঝে বছরখানেকের বেশি সময় ভেবেছিলাম সরিয়ে নেব নিজেকে। থমকে গিয়েছিলাম। কিন্তু হার মানিনি। তাই ২০১৯ থেকে শুরু করলেও প্রথম ব্রেকটা পেতে ২০২৪, প্রায় পাঁচ বছর লেগে গেল।

আগামীর লক্ষ্য নিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, টলিউড আমার নিজের জায়গা। বংলা ভাষায় কাজ করি আমি। কিন্তু লক্ষ্য সব সময় বড় রাখাই উচিত। স্বপ্ন সব সময় বড় দেখাই উচিত। আমি টালিউডে বসেই অকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।

Link copied!