কিংবদন্তি অভিনেতা চিত্রনায়ক ফারুকের জন্মদিনে নেই কোনো আয়োজন। ১৯৪৮ সালের এই দিনে মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বেঁচে থাকলে ৭৬ বছরে পা রাখতেন জনপ্রিয় এই নায়ক। অর্থাৎ রোববার ১৮ আগস্ট তার ৭৬তম জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে তাকে নিয়ে নেই কোনো আয়োজন। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিরও নেই কোনো উদ্যোগ।
গত বছরের ১৫ মে তিনি মারা যান। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণসোম টিওরী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশের কবরস্থানে চিরঘুমে আছেন তিনি।
জন্মদিনে কেক কাটতে পছন্দ করতেন না আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। কারণ, হিসেবে তাঁর স্ত্রী ফারহানা ফারুক বলেন, “১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর থেকে কোনো দিন নিজের জন্মদিনে কেক কাটেনি ফারুক। তিন দশকের বেশি সংসার করছি, কখনও কেক কাটতে দেখিনি।”
বাবা আজগার হোসেন পাঠানের ছিল পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলে। ফারুক ছিলেন ভাইদের মধ্যে সবার ছোট। এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে ফারুকের অভিষেক ঘটে। তাঁর পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ার। এই সময়ে তিনি অভিনয় করেন বহু দর্শক নন্দিত চলচ্চিত্রে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তি পায় ‘জলছবি’। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় খান আতাউর রহমান পরিচালিত ফারুক অভিনীত ‘আবার তোরা মানুষ হ’। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘লাঠিয়াল’। এ ছবিতে ফারুকের চরিত্রটি সাড়া ফেলে। একই বছর মুক্তি পায় খান আতার আরেক সিনেমা ‘সুজন সখী’। এতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন কবরী। গ্রামীণ পটভূমির গল্পে নির্মিত এ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র গ্রামীণ তরুণ সুজনের ভূমিকায় ফারুকের নামডাক ছড়িয়ে পড়ে। পরের বছর মুক্তি পায় আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’। এটিও দর্শকসাড়া জাগিয়েছে।
১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় শহীদুল্লা কায়সারের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে আবদুল্লাহ আল মামুনের সিনেমা ‘সারেং বৌ’। সিনেমায় কদম সারেং চরিত্রে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবিতে মিলন চরিত্রে ফারুকের অভিনয় দর্শকমনে দাগ কাটে। পরবর্তী সময়ে ফারুক চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেন। এরপর ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ছিলেন পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ফারুক থেকেছেন আমৃত্যু। ছাত্রজীবন থেকে দলটির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন নানা পুরস্কার। ‘লাঠিয়াল’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্র ক্যাটেগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন কিংবদন্তি এই নায়ক।