দেশের সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একটি বড় অংশজুড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে নির্মাণ হয়ে আসছে এ ধরনের সিনেমা। পর্দায় উঠে এসেছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতাও। এ বছর বিভিন্ন জনরায় মোট ৫০টির মতো সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, এরমধ্যে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০টির মতো সিনেমা মুক্তি পেয়েছে- যেগুলো মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি করে নির্মিত।
সিনেমাগুলোর মধ্যে ১৯৭১ সেই সব দিন, মা,রেডিও, দুঃসাহসী খোকা, মুজিব এবং ফ্ল্যাশব্যাক ৭১ বেশ আলোচিত হয়েছে। এরমধ্যে ‘ফ্ল্যাশব্যাক ৭১’ সিনেমাটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে সরকারি অনুদান পেলেও সিনেমাটি ১৫ ডিসেম্বর পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি হিসেবে মুক্তি পেয়েছে।
এ বছর মুক্তি পাওয়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে ‘১৯৭১ সেই সব দিন’। হৃদি হকের নির্মাণে সরকারি অনুদান পাওয়া এই সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে দাপটের সঙ্গে চলেছে।
সাধারণ দর্শক থেকে চিত্রসমালোচক, সকলেই ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ এর নির্মাণ ও গল্প বলার উপস্থাপন পছন্দ করেছেন। সমালোচকরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্টেরিওটাইপ গল্প বলার ভঙ্গি থেকে বের হয়ে হৃদি হক তার সিনেমায় নতুনত্ব দিয়েছেন বলেই দর্শক সিনেমাটি দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। শুধু দেশেই নয়, সিনেমাটি দেশের বাইরেও হয়েছে প্রশংসিত!
আলোচনায় ছিলো মুক্তিযুদ্ধ নির্ভর আরেক ছবি ‘মা’। নাটকের দাপুটে নির্মাতা অরণ্য আনোয়ার সময়ের সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করেন। ১৯৭১ সালে মৃত ঘোষণা করা সাত মাসের এক সন্তানকে নিয়ে তার অসহায় মায়ের গল্প উঠে এসেছে এই ছবিতে। ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরীমনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে অনন্য মামুনের ছবি ‘রেডিও’ নিয়েও ছিলো দর্শকের কৌতুহল। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শোনার ক্ষেত্রে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত একটি গ্রামে রেডিও কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, তা নিয়ে এই চলচ্চিত্রের গল্প। ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন চিত্রনায়ক রিয়াজ ও জাকিয়া বারী মম।
নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজারের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিশোর বেলার কাহিনি নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘দুঃসাহসী খোকা’ দর্শক মহলে বেশ আলোড়ন তৈরি করে।
এছাড়াও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে শ্যাম বেনেগাল নির্মিত বছরের বহুল আলোচিত ‘মুজিব’ এর বড় অংশ জুড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ।
বিগত বছরের তুলনায় সরকারি অনুদানে এই বছরই মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা বেশি মুক্তি পেয়েছে। আগামীতে এর ধারাবাহিকতা থাকবে বলে মনে করছেন সিনেসংশ্লিষ্টরা।