ছবিটি যে সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত, এটা জানা না থাকলে মনে হতে পারে অতি নাটকীয় কোনো গল্প দেখানো হচ্ছে। কিন্তু মাঝে মাঝে বাস্তব তো গল্পের চেয়েও অদ্ভুত হয়ে ওঠে। আর যেখানে একজন মায়ের লড়াই তার সন্তানকে কাছে পাওয়ার জন্য, সেই গল্পে মা পারেন না এমন কিছু নেই।
তাই দেবিকা চ্যাটার্জির গল্পটা একটু অন্য রকম। পর্দায় দেবিকা চ্যাটার্জির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রানী মুখার্জি। যদিও তাকে বেশ বয়স্ক লেগেছে পর্দায়। তার স্বামী অনিরুদ্ধ চ্যাটার্জির ভূমিকায় অভিনয় করা অনির্বাণ ভট্টাচার্যকেও রানীর চেয়ে বয়সে ছোট লেগেছে।
সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, রানীর বয়স এখন ৪৫ বছর আর অনিরুদ্ধর ৩৬। বাস্তবেই যাদের প্রায় ৯ বছরের বয়সের তফাত, সেটা পর্দাতেও ফুটে উঠবে। এ ক্ষেত্রে রানী মুখার্জির বদলে অন্য কোনো অভিনেত্রীকে নিতে পারতেন পরিচালক। তবু গল্পের চেয়ে যখন স্টার কাস্ট বড় হয়ে ওঠে তখন রানী মুখার্জিই হয়ে ওঠেন দেবিকা চ্যাটার্জি, কিছুটা জোর করে হলেও।
এর বাইরে আইনজীবী ড্যানিয়েল সিং চুইপেকের ভূমিকায় জিম সার্ভ বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। আর অনির্বাণের চরিত্রে খুব বেশি অভিনয়ের সুযোগ ছিল না।
ছবির গল্পে দেখা যায় নরওয়েতে প্রবাসজীবন শুরু করতে না করতেই চ্যাটার্জি পরিবার জটিল এক সমস্যায় পড়ে। তাদের দুই বছর বয়সী ছেলে এবং পাঁচ মাস বয়সী মেয়েকে নরওয়ে সরকারের ফস্টার কেয়ার সিস্টেমের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে শিশু দুটি বাবা-মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এখানে ভারত ও নরওয়ে দুই দেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক অমিলগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে গেলে সেই দেশের নিয়মকানুন বা সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার যে চ্যালেঞ্জ, সেটা দেখানো হয়েছে। একই সঙ্গে নিজের সংস্কৃতি পালন করাটাও অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। কারণ, সে দেশের অনেকেই সেটা বুঝতে পারেন না। ফলে তাদের মতো করে তারা সেটাকে কখনো কখনো ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেন।
সন্তানদের ফিরে পাওয়ার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন দেবিকা। সেখানে নানা যুক্তি তর্কের ভেতর দিয়ে দুই দেশের সাংস্কৃতিক তফাতটা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, ভারত বা উপমহাদেশে হাত দিয়ে খাওয়াটাই নিয়ম। মা-ও তার সন্তানকে হাত দিয়ে খাবার খাইয়ে দেন। কিন্তু নরওয়ে সরকারের কাছে হাত দিয়ে বাচ্চাকে খাবার খাওয়ানো মানে ফোর্স ফিডিং বা জোর করে খাওয়ানো। যেটা বাচ্চাদের জন্য ভালো নয় বলেই তারা মনে করে। এ রকম আরও বেশ কিছু কারণে মায়ের কাছ থেকে বাচ্চাদের আলাদা করে কেয়ার সেন্টারে রাখা হয়।
পরে আদালতের রায় অনুযায়ী কোনো দম্পতি এসব বাচ্চাকে দত্তক নিতে পারেন। এর পেছনে বড় আর্থিক সুবিধাও রয়েছে। অর্থাৎ ফস্টার কেয়ারে থাকা বাচ্চাদের দত্তক নিতে হলে বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে হয়। নরওয়ে সরকারের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সার্ভিসের আওতায় বেশ কিছু প্রোগ্রাম রয়েছে। যার মাধ্যমে এসব বাচ্চাদের ভরণপোষণ ও লালন-পালনের বিষয়টি দেখভাল করা হয়। নরওয়ে সরকারও বাচ্চাদের পেছনে অর্থ খরচ করে।
আর এই সিস্টেমের বিরুদ্ধে এক অসম লড়াই শুরু করেন দেবিকা চ্যাটার্জি। নরওয়ে থেকে কলকাতার আদালত পর্যন্ত চলে সে লড়াই। যার মাধ্যমে উঠে আসে নানা পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ। শেষ পর্যন্ত দেবিকা কি ফিরে পেয়েছিলেন তার সন্তানদের? সেটা জানতে হলে ছবিটা দেখতে হবে।