নতুন সহস্রাব্দের শুরুতে লন্ডনে ক্যাটরিনা কাইফকে আবিষ্কার করেছিলেন বলিউডের পরিচালক কাইজাদ গুস্তাদ। ক্যাটরিনা তখন লন্ডনের টিনএজ ফ্যাশন মডেল হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। সেই সময় লন্ডনের একটি ফ্যাশন শোয়ে বলিউডের ফিল্ম মেকার কাইজাদ গুস্তাদের সঙ্গে তার দেখা হয়।
কাইজাদ গুস্তাদ তখন জ্যাকি শ্রফের স্ত্রী আয়েশা দত্তের প্রযোজনায় একটি হিন্দি ছবি তৈরি করছিলেন। যার নাম ছিল ‘বুম’। ২০০৩ সালে সেই ছবিটি রিলিজ হয় এবং বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই কাশ্মীরি বাবার মেয়ে হিসেবে ভারতের হিন্দি ফিল্ম বা বলিউডের অভিনয় করার শখ ছিল ক্যাটরিনার। প্রথম ছবি ব্যর্থ হলেও হিন্দি ছবিতে তার নিজের জায়গা পাওয়ার চেষ্টা কখনোই ছাড়েননি ক্যাটরিনা। হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের ক্যারিয়ারের শুরুতে ক্যাটরিনার সবচেয়ে সমস্যা ছিল হিন্দি উচ্চারণ নিয়ে। সংলাপ বলার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই ক্যাটরিনার উচ্চারণে ব্রিটিশ অ্যাকসেন্ট চলে আসত।
হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার মুখে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সময় ক্যাটরিনা একটি তেলুগু ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। সেই সময় বলিউডে ক্যাটরিনা কাইফকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন সালমান খান। মুম্বাইয়ের বান্দ্রার ব্যান্ড স্ট্যান্ডে সালমান খানের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের একটি ফ্ল্যাটে দীর্ঘদিন বাস করেছেন ক্যাটরিনা কাইফ। বস্তুত সালমান খানই ক্যাটরিনাকে বলিউডে তার ক্যারিয়ার তৈরি করতে পেছন থেকে সাহায্য করেছেন।
২০০৫ সালে ডেভিড ধাওয়ানের পরিচালনায় সালমান খান ক্যাটরিনাকে নায়িকা করে ছবি করলেন। যার নাম ছিল ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিউ কিয়া’। মূলত এই ছবির সাফল্য থেকেই ক্যাটরিনার বলিউডের যাত্রা শুরু। এরপর একে একে ‘নমস্তে লন্ডন’, ‘নিউইয়র্ক’, ‘মেরে ব্রাদার কি দুলহন’, ‘এক থা টাইগার’, ‘ধুম’, “টাইগার জিন্দা হ্যায়’র মতো ছবিতে অভিনয় করে গিয়েছেন ক্যাটরিনা।
সালমান খান ও রনবীর কাপুরের সঙ্গে অন্তরঙ্গ প্রেমের সম্পর্কে জড়ালেও শেষমেশ ক্যাটরিনার সঙ্গে সেই সম্পর্কগুলো বিয়ে পর্যন্ত যায়নি। শেষমেশ বলিউডের নায়ক ভিকি কৌশলের সঙ্গে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সাতপাকে বাঁধা পড়েছেন ক্যাটরিনা। বিয়ের পর ক্যাটরিনা কাইফের রিলিজ হতে যাওয়া হরর কমেডি ছবি ‘ফোন ভূত;-এর ট্রেলার লঞ্চে মুখোমুখি হলেন মুম্বাইয়ের জুহুর পিভিআর থিয়েটারের অডিটরিয়ামে। উত্তর দিলেন নানা প্রশ্নের।
সংবাদ প্রকাশ : সিনেমার নায়িকাদের বাস্তব বিবাহিত জীবনের কথা জানতে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই উৎসাহিত হয়। তারা জানতে চান পর্দার নায়িকাদের বিবাহিত জীবন কি পর্দার মতো রঙিন, নাকি বাস্তবের মতো সাদা-কালোয় মেশানো?
‘ফোন ভূত’ ছবির একটি নাচের দৃশ্য
ক্যাটরিনা : পর্দায় অভিনয়টা আমাদের পেশা। আর বাস্তবের বেঁচে থাকাটা আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতই আমাদের। সেই জীবন আর পাঁচজন সাধারণ মানুষদের মতই সাদা, কালো, নীল, লাল, হলুদ, সবুজে মেশানো। বাস্তবের আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের যা অনুভূতি, উপলব্ধি হয়, আমাদেরও তাই হয়।
সংবাদ প্রকাশ : বিয়ের পর আপনার এই যে হরর ফিল্ম ‘ফোন ভূত’ রিলিজ হচ্ছে, সেখানে আপনার বিপরীতে নায়ক সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী। কোনো সালমান খান কিংবা অক্ষয় কুমার নন। তাই এই ছবির আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু মূলত আপনি। আপনাকে ঘিরেই দর্শকদের আগ্রহ বেশি থাকবে। তার জন্য কি কোনো বাড়তি চাপ অনুভব করছেন?
ক্যাটরিনা : ১৮ বছরে ৪১টা ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছি। কিন্তু এখনো নতুন ছবি রিলিজের আগে আমি প্রথম ছবি রিলিজের মতোই নার্ভাস হয়ে যাই। মনের ভেতর একটা চাপা কী হয় কী হয় ভাব থাকে, সেটাকে লুকনো যায় না। ফোন ভূতের মতো ছবি আমি আগে করিনি। কিন্তু যেদিন আমার প্রডিউসার রিতেশ আমাকে গল্পটা শুনিয়েছিলেন, আমি কোনো সময় না নিয়েই হ্যাঁ বলেছিলাম। আমি বলিনি যে আমাকে আরও দু-তিন দিন। ভেবে নিয়ে বলছি। এটা আমি বলিনি। কেননা, আমার গল্প শুনেই মনে হয়েছিল, এই কনসেপ্ট বা গল্পটা একেবারে অন্য রকম। যা দর্শকদের দেখানোর জন্য ইউনিক।
সংবাদ প্রকাশ : অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে তৈরি করার জন্য আপনি কি হরর মুভি দেখেন?
ক্যাটরিনা : সত্যি কথা বলব? আমি সাধারণত হরর মুভি দেখি না। ‘ভুলভুলাইয়া টু’ দেখতে বসেও আমি পুরোটা দেখতে পারিনি। হরর মুভি দেখতে আমার নিজেরই ভীষণ ভয় করে। ভুলভুলাইয়া টু দেখতে বসে আমি বুঝতে পারছিলাম যখন টাবু আসছেন এবং এর মধ্যে অনেক হাসির খোরাক আছে, তা সত্ত্বেও আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম। হাত দিয়ে চোখ দুটো ঢেকে ফেলে ছিলাম। বিলিভ মি।
সংবাদ প্রকাশ : ১০ মাস আগেই আপনি বিয়ে করেছেন। ঘটনাচক্রে আপনি এবং হ্যাজব্যান্ড হিসেবে ভিকি কৌশল দুজনেই অভিনেতা। দুজনের এই ব্যস্ত শিডিউলে দুজন দুজনকে কতটা সময় দিতে পারছেন?
ক্যাটরিনা : আমাদের দুজনেরই একই পেশা। অ্যাক্টিং। ফিল্ম অ্যাক্টিংয়ে অভিনেতাদের জীবন খুবই ব্যস্ত হয়। আমি খুব খুশি। আমি ভিকির মতো একজন মানুষকে আমার জীবনে পেয়েছি। বিয়ে করে আমি এটুকু বুঝেছি যে বিয়ের আগে জীবন এবং বিয়ের পরের জীবনের মধ্যে অনেক ফারাক। বিয়ে মানুষের জীবনে একটা অন্য রকম বদল আনে। তখন দুজনে মিলে একটা যৌথ জীবনকে শেয়ার করতে হয়। এই যৌথ জীবন, এই শেয়ারিং একটা অন্য অর্থ নিয়ে আসে জীবনে। সেটা আমি বুঝেছি। এবং এটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা আমার কাছে। একটা নতুন অভিজ্ঞতা। কিন্তু আমাদের দুজনেরই যা শিডিউল, তাতে শেষ কয়েকটা মাস দুজনে একসঙ্গে কাটানোর বেশ মুশকিল হয়ে উঠছে। এত দিন এই পেশায় কাটিয়ে এটুকু বলতে পারি ভিকির মতো মানুষকে পেয়ে আমি খুব খুশি। আমি মনে করি এটা আমার সৌভাগ্য।