একুশ আমাদের অহংকার। আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন শুরু হয়েছিল ভাষাকে কেন্দ্র করেই। ভাষা আন্দোলন ঘিরে প্রথম প্রতিবাদ হয় কবিতার মাধ্যমে। পরে গান, প্রবন্ধ, সংকলন, নাটক, চিত্রকর্ম, চলচ্চিত্রসহ নানা মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন উঠে এসেছে। ঠিক ওই সময় ভাষা আন্দোলনে যাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম জহির রায়হান। তিনি প্রথম একুশের পটভূমি বা ভাষা আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
১৯৫৭ সালে এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হয়। ষাটের দশকের শেষভাগে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুমোদন পেতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো। এমন অবস্থায় জহির রায়হান ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামেই চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এফডিসিতে সেটা জমাও দিয়েছিলেন। পরে তৎকালীন সরকারের অসহযোগিতার কারণে এটি আলোর মুখ দেখেনি। ওই সময় রাজনৈতিক আন্দোলন তুঙ্গে ছিল। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। এরপর সত্তরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটু পরিবেশ অনুকূলে এলো।
ভাষা আন্দোলনের প্রথম চলচ্চিত্র
তখন গণআন্দোলনের পটভূমিতে ‘জীবন থেকে নেয়া’ নির্মাণ করলেন জহির রায়হান। যেখানে একুশে ফেব্রুয়ারির একটা অংশ রয়েছে। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি ব্যবহূত হয়। আছে প্রভাতফেরি, বিভিন্ন সংগঠনের পুষ্পস্তবক অর্পণের দৃশ্য। ‘জীবন থেকে নেয়া’ একমাত্র চলচ্চিত্র, যেখানে সমকালীন গণআন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন, রাজনীতি, পুলিশি নির্যাতন, একুশের বিভিন্ন কর্মসূচি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ, একনায়কতন্ত্র ও সামরিকতন্ত্রে স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদসহ প্রসঙ্গ ও ঘটনা, পারিবারিক কর্তৃত্বের মেয়েলি লড়াই রূপকের আড়ালে তুলে ধরা হয়েছিল।
তারপরও কিছু ছবিতে, কিছু প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ও কয়েকটি ডকুমেন্টারিতে একুশ এসেছে। একুশের ঘটনা নিয়ে আহমদ ছফা লিখেছিলেন ‘ওঙ্কার’ নামে একটি উপন্যাস, যা অবলম্বনে ২০০৬ সালে শহীদুল ইসলাম খোকন নির্মাণ করেন ‘বাঙলা’। সিনেমাটিতে হুমায়ুন ফরীদি, মাহফুজ আহমেদ, শাবনূর অভিনয় করেন।
ভাষা আন্দোলনের সর্বশেষ চলচ্চিত্র
এরপর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভাষা আন্দোলনের মতো একটা বিশাল ঘটনাকে প্রযোজক-নির্মাতারাও গুরুত্ব দেননি। ২০১৯ সালে ভাষা আন্দোলনের দিনে মুক্তি পেয়েছে তৌকির আহমেদের নির্মিত সিনেমা ‘ফাগুন হাওয়ায়’। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’ গল্পের অনুপ্রেরণায় সিনেমাটি নির্মিত হয়। একটি মফস্বল অঞ্চলে পাকিস্তানী এক পুলিশ অফিসার সেই গ্রামের একে বউ কথা কও পাখিতে উর্দু শিখাতে চেষ্টা করে। সেখানে গ্রামের অন্যদেরও উর্দু শেখানোর ব্যবস্থা করে সে। সেখানে গ্রামের লোকজনও সেই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে একসময় একতাবদ্ধ হয়।
ছবিটিতে কেন্দ্রীয় দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম ও তিশা। চলচ্চিত্রটির পাকিস্তানী পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা যশপাল শর্মা। ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছেন আবুল হায়াৎ, আফরোজা বানু, ফারুক হোসেন, ফজলুর রহমান বাবু, সাজু খাদেম, রওনক হোসেন আজাদ সেতু, আবদুর রহিম, হাসান আহমেদ প্রমুখ।
ভাষা আন্দোলনের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র
এছাড়া ভাষা আন্দোলনের ওপর নির্মিত হয়েছে বেশকিছু প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। শবনম ফেরদৌসী নির্মাণ করেছেন ‘ভাষা জয়িতা’। রোকেয়া প্রাচী নির্মাণ করেছেন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র বায়ান্ন’র মিছিল। রফিক উদ্দিন আহমেদ ভাষা আন্দোলনের উপর নির্মাণ করেছেন ‘হৃদয়ে একুশ’। ছবিটি মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পেয়েছে।