সংগীতশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলের মতো কণ্ঠ আর দ্বিতীয়টি পাওয়া মুশকিল বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী বাপ্পা মজুমদার। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রয়াত এই শিল্পীকে নিয়ে দেশের একটি গণমাধ্যমে স্মৃতি কথা লিখেছেন বাপ্পা মজুমদার।
তিনি লিখেছেন, ১৯৯২ সালে জুয়েল ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা শাহবাগের আজিজ মার্কেটে। জুয়েল ভাইয়ের অফিস ছিল সেখানে। ওখানেই তার সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ, পরিচয় এবং সখ্য। একটা সময় সেখানে নিয়মিতই যাতায়াত করতাম। তার সঙ্গে আমি বাজাতাম। আমিও তখন একটু-আধটু গান করতাম। জুয়েল ভাইয়ের উদ্যোগেই আমার প্রথম অ্যালবাম করা এবং প্রকাশ করা। অ্যালবামের নাম ‘তখন ভোরবেলা’। সেই অ্যালবাম দিয়েই শিল্পী বাপ্পা মজুমদার হিসেবে আমার পথচলা শুরু।
বাপ্পা মজুমদার আরও লিখেছেন, জুয়েল ভাইয়ের মাধ্যমেই আমার পরিচয় হয় সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গে। তারপরেই তো দলছুটের জন্ম। মা, বাবা আর বড়দার পরে আমার জীবনে দুজন মানুষকে আমার মেন্টর হিসেবে বিবেচনা করি। একজন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল, অন্যজন সঞ্জীব চৌধুরী। আমার পেশাগত জীবনে এই দুজন মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশি। এই সংগীত তারকা লিখেছেন, আমার দেখা অন্যতম আর অসম্ভব ভালো একজন মানুষ হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। একজন অসাধারণ বন্ধু, একজন অসাধারণ ভাই। অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত এক ব্যক্তিত্ব। আর গায়ক জুয়েলের কথা তো বলাই বাহুল্য। এত দুর্দান্ত গায়কি তার। বাংলাদেশে তার মতো কণ্ঠ আর দ্বিতীয়টি পাওয়া মুশকিল। একজন অসম্ভব উঁচুমানের নির্মাতা। জুয়েল ভাইয়ের জন্য আমার প্রথম সুর করা গানটির শিরোনাম ‘আমার আছে অন্ধকার’। (আইয়ুব) বাচ্চু ভাই গানটির সংগীত আয়োজন করেছিলেন। এই নামেই অ্যালবাম করেছিলেন জুয়েল ভাই। এটা ছিল অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাক। এরপর আরও অনেক গান করেছি তার জন্য। তার শেষ অ্যালবামটিও আমার করা, আমার প্রোডিউস করা।
সবশেষে বাপ্পা আরও লিখেছেন, অল্প কদিন আগেই তার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে। কথা বেশি দূর এগোয়নি। তিনি আমাকে মেসেজ দিয়েছিলেন, ‘বাপ্পা, আমরা এ নিয়ে পরে কথা বলি। কারণ আমার সারা শরীরে তীব্র ব্যথা হচ্ছে। আমি ব্যথা সহ্য করতে পারছি না।’ এরপরে তার সঙ্গে আর কথাও হয়নি, দেখাও হয়নি। যখন হাসপাতালে গিয়েছিলাম, তখন তিনি আইসিইউতে। ডাক্তাররা তখন কাউকেই অ্যালাউ করেননি। মন থেকে চাইছিলাম, জুয়েল ভাই যেন চলে না যান, সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন আমাদের মাঝে। তা আর হলো না। সারাটা জীবন খুব মিস করব জুয়েল ভাইকে।
২০১১ সালে লিভার ক্যানসার ধরা পড়ে জুয়েলের। এরপর ফুসফুস এবং হাড়েও সেটি ক্রমশ সংক্রমিত হয়। সর্বশেষ গত ২৩ জুলাই রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সেখান থেকেই মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই সংগীতশিল্পী।