• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
আলোচনা

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল: বই থেকে ওয়েবে


ফাহিম ইবনে সারওয়ার
প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৩, ০৯:১৭ পিএম
ইন্দুবালা ভাতের হোটেল: বই থেকে ওয়েবে

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল উপন্যাসটি দুই বাংলার পাঠকদের মন ছুঁয়ে গেছে আগেই। ভোজনপ্রিয় বাঙালির অনেক আবেগ জড়িয়ে রয়েছে বইটির সাথে। শুধুমাত্র রান্নাঘর আর খাবারেই আটকে থাকেনি ইন্দুবালা ভাতের হোটেল, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি আন্দোলনকেও সচেতনভাবে তুলে ধরা হয়েছে উপন্যাসটিতে।

কল্লোল লাহিড়ীর উপন্যাস অবলম্বনে একই নামের ওয়েব সিরিজ সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হৈচৈ-তে। এতে ইন্দুবালার চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভশ্রী গাঙ্গুলি।

একটা বই পাঠকের কল্পনাকে অনেকদূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। লেখকের বর্ণনার উপর ভিত্তি করে পাঠক তার দৃশ্যকল্প সাজিয়ে নেন। ফলে একই কাহিনি একেক পাঠকের মনে একেক রূপ ধারণ করে। কিন্তু সিনেমার ক্ষেত্রে দর্শককে ভরসা রাখতে হয় পরিচালকের উপর। তার দেখান দৃশ্যই দর্শকদের সম্বল।

সাহিত্য অবলম্বনে সিনেমা বা সিরিজ তৈরির বড় চ্যালেঞ্জ এটাই। সাহিত্যের কাছাকাছি পৌঁছানো গেল কিনা দর্শক এবং পাঠকরা প্রথমে সেটাই বিচার করেন।

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল উপন্যাসের যে বিস্তৃত প্রেক্ষাপট সেটাকে ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে তুলে ধরা সত্যিই কঠিন ছিল। উপন্যাসের সাথে তুলনায় গেলে সিরিজটি পিছিয়ে থাকবে তবে যদি শুধু একটি সিরিজ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাহলে সমসাময়িক অনেক সিরিজের চেয়ে এগিয়ে থাকবে ইন্দুবালা ভাতের হোটেল।

কলকাতার ছেনু মিত্তির লেনের ইন্দুবালা ভাতের হোটেল আর খুলনার কলাপোতা গ্রাম খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। বিশেষ করে ইন্দুবালার কৈশোরের দিনগুলো। বাংলার চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশের ছিমছাম যে রূপটি তা চমৎকারভাবে উঠে এসেছে। মনিরুলের সাথে ইন্দুবালার প্রেমও হয়ে উঠেছে কাব্যিক। ঠিক যেন পল্লীকবি জসীমউদদীনের নকশীকাঁথার মাঠ।

তবে উপন্যাসে খাবারের রেসিপিগুলো যে রকম প্রাণবন্ত ছিলো লেখকের প্রাণবন্ত বর্ণনার কারণে, সিরিজে সেই মুগ্ধতা ছড়াতে পারেনি ইন্দুবালার স্পেশাল রেসিপিগুলো। ৪৭-এর দেশভাগ, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ষাটের দশকের শেষভাগে শুরু হওয়া পশ্চিমবঙ্গের নকশাল আন্দোলনের প্রসঙ্গ এসেছে সীমিত পরিসরে।

সন্তানদের সাথে ইন্দুবালার বোঝাপড়ার বিষয়টিও সেভাবে আসেনি। এখানে আরও কাজ করতে পারতেন পরিচালক। সিরিজের আবহসঙ্গীত এবং গানগুলো শ্রুতিমধুর হয়েছে। যুবতী এবং বৃদ্ধ ইন্দুবালার চরিত্রে শুভশ্রী গাঙ্গুলি ভালো অভিনয় করেছেন। এটি তার অভিনয় জীবনে স্মরণীয় একটি চরিত্র হয়ে থাকবে।

সবশেষে বলা যায়, থ্রিলারে ভরা ওয়েব সিরিজের দুনিয়ায় ইন্দুবালা তার স্বতন্ত্র চরিত্র নিয়ে দর্শকের হৃদয়ে থাকবেন অনেকদিন।
 

Link copied!