এবার একুশে ফেব্রুয়ারিতে দেশে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব চললেও, দূর অস্ট্রেলিয়া থেকে খবর এলো দারুণ আনন্দের। জানা গেলো, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিনেমা ‘জীবন থেকে নেয়া’ প্রদর্শিত হচ্ছে দেশটির প্রেক্ষাগৃহে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার দর্শকদের দেখানো হচ্ছে কালজয়ী নির্মাতা জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাটি।
ইংরেজি সাবটাইটেলসহ ‘টু-কে’ (স্বচ্ছ রেজ্যুলেশন) সংস্করণে সিনেমাটি দেখাচ্ছেন পরিবেশনা সংস্থা বঙ্গজ ফিল্মসের প্রতিষ্ঠাতা তানিম মান্নান।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সিডনিতে হয়টস ওয়েদারিল পার্কের হয়েটস সিনেমা হলে এবং রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ডুমারেস্ক স্ট্রিট সিনেমা হলে ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমার দু’টি প্রদর্শনী রয়েছে।
চিরচেনা পারিবারিক কাহিনির আবহে, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত এই সিনেমা। একটি দেশ, একটি সংসার, চাবির গোছা আর আন্দোলন- এই সিনেমার মূল উপজীব্য বিষয়।
তরুণ প্রজন্মকে ঐতিহাসিক চলচ্চিত্রের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী করতেই ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাটি দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন মান্নান।
কিন্তু বিষয়টি তার জন্য এত সহজ ছিল না। ৫৫ বছর আগে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি দেখাতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, তা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।
তিনি বলেন, ‘সিনেমাটি দেখানোর ইচ্ছা তৈরি হয়েছে প্রায় তিন বছর আগে, আমি তো এখানে নিয়মিত বাংলা সিনেমা দেখাই, অর্ধশতাধিক সিনেমা দেখানো হয়ে গিয়েছে। একদিন মনে হল কমার্শিয়াল সিনেমা তো দেখানো হচ্ছে যদি কালচারাল সিনেমাগুলো নিয়ে কোনো আয়োজন করা যায়। একজন প্রযোজককে বললাম জহির রায়হানের সিনেমাটি দেখাতে চাই। কিন্তু তিনি জানালেন, নির্মাতার পরিবার থেকে অনুমতি পাওয়া সম্ভব হবে না। আমিও দমে গেলাম। কিন্তু কোনোভাবেই দেখানোর ইচ্ছাটা বাদ দিতে পারছিলাম না।’
জহির রায়হানের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় রাষ্ট্রের অধিকার আদায়ের গল্পের ‘জীবন থেকে নেয়া’ মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৭০ সালে। সিনেমাটি ইউটিউবে দেখা গেলেও সিনেমার ভিজ্যুয়াল ও অডিও এবং দৃশ্য স্পষ্ট নয়।
মান্নান বলেন, “ইউটিউবে দেখলাম ‘জীবন থেকে নেওয়া’ সিনেমা আছে, কিন্তু ঘোলা প্রিন্ট, ঠিকমতো বোঝা যায় না। সেটা দেখে সিনেমাটি সংস্কার করে দেখানোর ইচ্ছা তীব্রভাবে তৈরি হলো। এরপর সিনেমাটি দেখানোর জন্য পরিবারের অনুমতি পেতে সাহায্য করেছেন লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু। তিনি জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হানের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিলেন। অনল ভাই আমাদের শুভাকামনা জানালেন বললেন, ‘এটা খুব ভালো উদ্যোগ’।”
পরিবারের অনুমতি নিয়ে বিনামূল্যে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে সিনেমাটি প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে।
মান্নান পেশায় একজন প্রকৌশলী, সিনেমা নিয়ে প্রবল আগ্রহ থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি সিনেমা মুক্তি দিয়ে থাকেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় ৮ বছরে ৫৩টি সিনেমা মুক্তি দিয়েছেন তিনি।
আনিস ফিল্মস করপোরেশনের পরিবেশনায় এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন রওশন জামিল, খান আতাউর রহমান, শওকত আকবর, রাজ্জাক, রোজী সামাদ, সুচন্দা প্রমূখ।
এই সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’, ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’, ‘কারার ওই লৌহকপাট’এর মতো কালজয়ী কিছু গান।
‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমার সংগীত পরিচালক ছিলেন খান আতাউর রহমান। ১৯৭০ সালের ১১ এপ্রিল হলে আসে ‘জীবন থেকে নেয়া’।
২০ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের আয়োজনে এবং রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির সহযোগিতায় শুরু হয়েছে ‘সিনে ক্যারাভান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৫’। ৩ দিনব্যাপী এই উৎসবে বাংলাদেশ ছাড়া সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, মিশর, তিউনিসিয়াসহ ৯টি দেশের মোট ১২টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে।