শুক্রবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজর্ষি দে পরিচালিত ‘সাদা রঙের পৃথিবী’মুক্তি পেয়েছে। ছবিরই অভিনব প্রচারপর্ব হয়ে গেল সম্প্রতি গঙ্গাবক্ষে। বসন্তের হাওয়া গায়ে মেখে ছবির সঙ্গে যুক্ত সকলে আড্ডা দিলেন। মূলত নারীকেন্দ্রিক ছবি। যার প্রধান চরিত্রে রয়েছেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়াও সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন সৌরসেনী মৈত্র, রিচা শর্মা, অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমার, অরিন্দম শীল, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
ছবি রিলিজের এই সময়ে সিনেমা নিয়ে কথা বললেন শ্রাবন্তী। বসন্ত কেমন কাটছে জিজ্ঞেস করতেই শ্রাবন্তী হেসে ফেললেন– ‘এই বসন্ত শুধু কাজ করেই কাটছে। শো, শুটিং, নতুন ছবির প্রোমোশন। এখন কাজের সঙ্গেই প্রেম।’ ২৫ বছরের বেশি কাটিয়ে ফেললেন ইন্ডাস্ট্রিতে। ১৯৯৭ সালে ‘মায়ার বাঁধন’ দিয়ে শুরু। ফিরে তাকালে কী মনে হয়? অভিনেত্রী বলছেন, ‘অনেক কিছু দেখলাম, অনেক ধরনের চরিত্রের সাক্ষী রইলাম। এত ছোটবেলা থেকে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি, একটা সময় সিরিয়ালও করেছি। অভিনয় আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অভিনয়ের মধ্যেই থাকতে চাই। প্রচুর স্ট্রাগলও করেছি। ১৬-১৭ বছরে মা হয়েছি। পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া কিছুই করতে পারতাম না। কারণ, তখন আমি তো নিজেই ছোট। মা-দিদি-বাবা সকলের সাহায্য ছাড়া কিছুই পারতাম না, এখনও তাই। ওদের সমর্থন ছাড়া এতটা দূর এগোতে পারতাম না। এটার জন্য আমি ব্লেসড।’
‘সাদা রঙের পৃথিবী’ আজ মুক্তি পেয়েছে। যেখানে শ্রাবন্তী দ্বৈত চরিত্রে। তার কেরিয়ারের মাইলস্টোন বলা যায়। এই প্রথমবার পজিটিভ এবং নেগেটিভ রোলে তিনি। অভিনেত্রী বলছেন, “শিবানী’ আর ‘ভবানী’ আমার দুটো চরিত্র। শিবানী একজন সমাজসেবী, যে বিধবাদের জন্য কাজ করছে, তাদের পাশে দাঁড়ায়, গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ায়। ভবানীর চরিত্র নিয়ে এখনই খুব বেশি বলা যাবে না। গ্রে শেডের এটুকুই।” বিধবা পাচার ছবির বিষয়। এত সিরিয়াস ইস্যু নিয়ে ছবি। যখন ছবির প্রস্তাব পান তখন কি একটু দ্বিধা ছিল? অকপট শ্রাবন্তী বলছেন, ‘প্রথমে অবশ্যই দ্বিধা ছিল। কারণ, বিধবা পাচারের মতো সিরিয়াস বিষয় নিয়ে মানুষের মনে অনেকরকম ভাবনাচিন্তা আসতে পারে। কিন্তু যখন রাজর্ষিদা আমাকে চরিত্রটা বোঝালেন, তখন আমার মনে হল, আমি তো একজন অভিনেত্রী, আমাদের সব ধরনের চরিত্র করতে হয়। মানুষ দেখতে চায় যে, শ্রাবন্তী এবার কী নিয়ে আসছে। সেইভাবেই আমাকে বোঝানো হয় যে, তুমি তো চরিত্রটা প্লে করছ, আসল নও। সেই চরিত্রটার মতো হলেই হল। রাজর্ষিদার মনে হয়েছে আমি এই চরিত্রে ভালো করব, তাই আমাকে নির্বাচন করেছেন। আমার মনে হয়েছে, প্রত্যেকটা চরিত্রকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমন নয় যে, আমাকে বা সৌরসেনীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেটা দারুণ লেগেছে। আর সবচেয়ে ভালো লেগেছে রাজর্ষিদা মহিলাদের নিয়ে কাজ করেন, মেয়েদের জায়গা দেন। ওর ব্যবহার খুব ভালো। এই ডাবল রোলের চ্যালেঞ্জটাও আমাকে আকর্ষণ করেছে।’
কিছুদিন আগেই নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘আমার বস’-এর কাজ শেষ হয়েছে। যেখানে রাখি গুলজারের সঙ্গে শ্রাবন্তী স্ক্রিন শেয়ার করেছেন। সেই প্রসঙ্গে জানালেন, “ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতা। এত সুন্দরী, আমি তো ওঁর দিকে ‘হ্যাঁ’ করে তাকিয়েই ছিলাম। আমার বাবার বিশাল ক্রাশ উনি। বাবা-মা দুজনেই খুব এক্সাইটেড। ওঁরা নন্দিতাদি আর শিবুদার খুব অনুরাগী। রাখি গুলজারকে দেখলাম শট শুরু হওয়ার আগে মজা করছেন, কিন্তু শট শুরু হতেই সিরিয়াস। ওই সুইচ অন-অফটা দারুণ পারেন। উনি কিংবদন্তি, ওঁকে দেখতেই থাকতাম আমি।”
২০২৪ সালটা শ্রাবন্তীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ‘সাদা রঙের পৃথিবী’ রিলিজ করছে। আসবে ‘আমার বস’। শুভ্রজিৎ মিত্রর ‘দেবী চৌধুরাণী’-র কেন্দ্রচরিত্র তিনি। যার ফার্স্ট শিডিউল হয়ে গিয়েছে। মার্চের মাঝামাঝি সেকেন্ড শিডিউল। যার জন্য শ্রাবন্তী প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছেন। ঘোড়ায় চড়া, তলোয়ার যুদ্ধ ইত্যাদি শিখেছেন। ‘কাবেরী অন্তর্ধান’ পর ফের প্রসেনজিতের সঙ্গে ‘দেবী চৌধুরাণী’ ছবিতে স্ক্রিন শেয়ার করছেন তিনি। একটা সময় কেউ কেউ বলেছেন শুভ্রজিৎ মিত্র-র সঙ্গে সম্পর্ক ভালো বলে আপনি কাজটা পেয়েছেন। এমন কথা শুনলে কেমন লাগে? ‘আমি একজন অভিনেত্রী। এত বছর ধরে কাজ করছি। আমার কি সেই যোগ্যতা নেই, যে এই চরিত্রটা পারব! সম্পর্ক ভালো করে তবে আমাকে কাজটা পেতে হবে কেন! এটা আমার খারাপ লাগে। কিন্তু আমি জানি সত্যিটা আসলে কী। শুভ্রজিৎকে পরিচালক হিসেবে আমি শ্রদ্ধা করি। এই চরিত্রে আমাকে বিবেচনা করেছেন বলে আমি কৃতজ্ঞ।’
যখন আপনাকে নিয়ে এমন সমালোচনা হয়, নিজেকে সামলান কীভাবে? স্পষ্ট বললেন অভিনেত্রী, ‘সমালোচনা সবাইকে নিয়ে হয়। যার নাম আছে, তার বদনাম আছে। মানুষ হিসাবে একসময় এগুলো হলে খারাপ লাগত। এত লোকের তো এত কিছু হয়, কেন আমাকে নিয়েই এমন হচ্ছে, মনে হত। কারুর কারুর স্বভাব আছে লোকজনকে নিয়ে সমালোচনা করার। এখন আর এসবে কিছু যায়-আসে না। কারণ আমি জানি, জীবন খুব অনিশ্চিত। আজ আছি, কাল নেই। বর্তমানে বাঁচি। ভবিষ্যতে ভগবান আছে, ভালোবাসার মানুষদের আশীর্বাদ আছে। সেটা ধরেই চলছি। কাজের প্রতি ভালোবাসা আর নিজের সততা আছে। সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
জীতু কমলের সঙ্গেও শ্রাবন্তীর সম্পর্ক নিয়ে কথা উঠেছিল অভিনেতার ব্রেক আপ-এর সময়। সেটা কি প্রভাবিত করেছিল? অভিনেত্রী বললেন, ‘এটা খুবই হাস্যকর। আমি জানি না আমাকে নিয়ে কেন এত লোকের সমস্যা। জীতুর সঙ্গে আমার সম্পর্ক, লন্ডনে আমরা দুটো ছবির শুটিং করেছিলাম, যেখানে জীতুর প্রাক্তন স্ত্রীও গিয়েছিল। ওর সঙ্গেও আমি অনেক ঘুরেছি। প্রচুর খাওয়া-দাওয়া করেছি। যখন আমাকে নিয়ে এই কথা উঠেছিল, আমি খুব হেসেছিলাম। আমি জানি সত্যিটা কী। এরকম কোনও ব্যাপারই নয়। লোকে যা ভাবছে ভাবুক।’
দেবের সঙ্গে আর কাজ হবে না, জিজ্ঞেস করতে শ্রাবন্তী বলেন, ‘দেব আমার খুব ভালো বন্ধু। এখনও একসঙ্গে ওর প্রোডাকশনে কাজ করা হয়নি। ইন ফিউচার নিশ্চয়ই আমরা একসঙ্গে ভালোভাবে কাজ করব।’