‘রকিং স্টার’ হিসেবে পরিচিত কন্নড় সিনেমার নায়ক যশ। ‘কেজিএফ’ সিনেমায় অভিনয় করে আকাশচুম্বী খ্যাতি কুড়ান। যশ-খ্যাতির পাশাপাশি অঢেল সম্পদেরও মালিক হয়েছেন। কিন্তু টি-বয় থেকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছানোর জার্নিটা মোটেও মসৃণ ছিল এই অভিনেতার।
অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন ছোটবেলায় দেখেন যশ। সেই স্বপ্নপূরণের জন্য মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেঙ্গালুরুতে পাড়ি জমান। বেঙ্গালুরুতে যাওয়ার আগেই কন্নড় সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ চূড়ান্ত করেছিলেন যশ। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে পৌঁছানোর মাত্র দুই দিন পর প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়। ফলে দারুণ বিপাকে পড়েন এই অভিনেতা।
স্মৃতিচারণ করে যশ বলেন, “আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে বেঙ্গালুরুতে যাই। বেঙ্গালুরুতে পৌঁছানোর পরই ভয় পেয়ে যাই। এত বড় শহর, কী ভীতিকর! কিন্তু আমি সবসময়ই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমি সংগ্রাম করতে ভয় পাই না। আমি যখন বেঙ্গালুরুতে পৌঁছাই তখন আমার পকেটে মাত্র ৩০০ রুপি ছিল। আমি জানতাম, এ পরিস্থিতিতে বাড়ি ফিরে গেলে বাবা-মা আমাকে আর ফিরতে দেবেন না।”
অনিশ্চিত জীবন জেনেও ৩০০ রুপি পকেটে নিয়ে ‘বেনাকা’ নামে একটি নাটকের দলে যোগ দেন যশ। সেখানে ব্যাকস্টেজে কাজ শুরু করেন। মূলত, টি-বয়ের কাজ করতে থাকেন এই অভিনেতা। বিনিময়ে প্রতিদিন ৫০ রুপি পারিশ্রমিক পেতেন। থিয়েটারের কাজের পাশাপাশি কলেজেও ভর্তি হন যশ। সেই সময়ে ‘নন্দগোকুলা’ শিরোনামে একটি টিভি সিরিজে অভিনয়ের সুযোগ পান। এ নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে অভিনেত্রী রাধিকা পণ্ডিতের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাকেই বিয়ে করেন যশ।
২০০৭ সালে ‘জামখাদা হুড়গি’ সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন যশ। ২০০৮ সালে ‘রকি’ সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০১০ সালে রোমান্টিক-কমেডি ঘরানার ‘মোড়লাসালা’ সিনেমায় অভিনয় করে নায়ক হিসেবে সাফল্য লাভ করেন এই অভিনেতা। পরের বছরই ‘কিরাটাকা’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এটিও ব্যবসায়ীকভাবে সাফল্য পায়। পরের কয়েক বছর ‘মোগিনা মানাসু’, ‘ড্রামা’, ‘গুগলি’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস রামচারি’, ‘মাস্টারপিস’-এর মতো হিট সিনেমা উপহার দেন যশ।
২০১৮ সালে মুক্তি পায় যশ অভিনীত ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার-১’। ২৫০ কোটি রুপি আয় করে অনেক রেকর্ড ভেঙে দেয় এই সিনেমা। কন্নড় ভাষার সিনেমার মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি আয় করেছিল। দীর্ঘ চার বছর এই রেকর্ড নিজের দখলে রাখেন যশ। ২০২২ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটির সিক্যুয়েল। মুক্তির পর বক্স অফিসে সিনেমাটি আয় করে ১২৫০ কোটি রুপি। এর মধ্য দিয়ে ভারতে সবচেয়ে বেশি আয় করা অন্যতম সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নেয় এটি।
‘কেজিএফ’ সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করেন যশ। আর এই খ্যাতি তাকে কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। নীতেশ তিওয়ারি পরিচালিত ‘রামায়ণ’ সিনেমায় ‘রাবণ’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। রণবীর কাপুর, সাই পল্লবী অভিনীত এই সিনেমাকে ভারতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমা বলা হচ্ছে! সিনেমাটির সহপ্রযোজক হিসেবেও রয়েছেন যশ।
এ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ২০০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৭৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বেশি) পারিশ্রমিক নিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন ৫০ রুপি পারিশ্রমিকে কাজ করা যশের জন্য এটি অনেক বড় প্রাপ্তি।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টিভি