‘আমরা যারা বয়স্ক অভিনেতা-অভিনেত্রী আছি তাদের আজকালকার পরিচালকরা বাতিল করে দিয়েছে। আমরা সব ভুলে গেছি, আমাদের ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার মত একটা অবস্থায় চলে এসেছে। অথচ বিদেশে এই বয়সের অভিনেতাদের নিয়ে সিনেমা হয় বিশেষভাবে চরিত্র রচনা করে।’ কথাগুলো অনেকটাই আফসোস নিয়ে বলেছেন দেশের কিংবদন্তি অভিনেতা আবুল হায়াত।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে আবুল হায়াত অভিনীত সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘দায়মুক্তি’। সম্প্রতি সিনেমাটির মুক্তি উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলেছেন গুণী এই অভিনেতা।
প্রবীণ অভিনয়শিল্পীদের চরিত্র আমাদের দেশের সিনেমা বা নাটকে কীভাবে তুলে ধরা হয় তার একটি চিত্র তুলে ধরেন আবুল হায়াত। তিনি বলেন, একটা সময় দেখা গেল- আমি যে চরিত্রে অভিনয় করি সেই চরিত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তারপর আমার একটা ছবি দেয়ালে টানানো হয়, এরপর সবাই পুরো সিনেমায় ওই ছবিটা নিয়ে কান্নাকাটি করে।
স্মৃতি রোমন্থন করে এই অভিনেতা একটা প্রতিজ্ঞার কথাও এদিন তুলে ধরেন। তার কথায়, ফাইটার মুসলিম আলি বলে ‘আপনাকে মাইরা যে কত আনন্দ সেটা আপনি বুঝবেন না। আপনারে মারলে পাবলিক হেব্বি খায়’। এরপর একশবার করে পরীক্ষা করলাম, আমি আর এই ধরণের চরিত্রে অভিনয় করব না।
বৃদ্ধাশ্রমের গল্পকে উপজীব্য করে নির্মিত সিনেমা ‘দায়মুক্তি’। এটি পরিচালনা করেছেন বদিউল আলম খোকন। সিনেমাটির বিষয়ে আবুল হায়াত বলেন, ‘দায়মুক্তি’র ব্যাপারে খোকন যখন আমাকে বলে তখন বলেছি- ‘আমি এটা করব’। কারণ এটা আমার অত্যন্ত পছন্দের চরিত্র। আমি তখন ক্যান্সার আক্রান্ত, আমি অসুস্থ ছিলাম। কিন্তু খোকন বলল, ‘আপনি সুস্থ হোন। হায়াত ভাই আপনি যদি সিনেমা না করেন তাহলে এই সিনেমাই করব না’। সুস্থ হয়েছি, আল্লাহর অশেষ রহমতে এখনও কিন্তু যুদ্ধ করে যাচ্ছি, ফাইট করে যাচ্ছি, অভিনয় করছি। এই চরিত্রে অভিনয় করার পর মনে শক্তি পেয়েছি, না আমি ফাইট করতে পারি।
আবুল হায়াত আরও বলেন, খোকন এখানে পিতা-মাতার প্রতি দায়মুক্তির বিষয়টি বলতে চেয়েছে। বাবা-মার বয়স হয়ে গেছে, টাকা-পয়সা দিয়ে আলাদা করে দেই। অনেকেই ভাবে টাকা-পয়সা দিয়ে দিলাম মুক্তি হয়ে গেল। কিন্তু না, বাবা-মা কি জিনিস একসঙ্গে থাকার কী উপকারিতা তার এই সিনেমাতে বোঝানো হয়েছে।
এদিকে, নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা হিসাবে সুখ্যাতি রয়েছে আবুল হায়াতের। তবে লেখালেখিতেও রয়েছে তার বিচরণ। প্রতি বছরই তিনি বই প্রকাশ করে থাকেন। এবারও প্রকাশিত হয়েছে তার নিজের লেখা আত্মজীবনী ‘রবি পথ’। সুবর্ণ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটি বই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে।