ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উপমহাদেশের একমাত্র সশস্ত্র নারী বিপ্লবী দল কুমিল্লার ছাত্রী সংঘ, শান্তি ঘোষ-সুনীতি চৌধুরী আর ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া নেপথ্যের মহানায়িকা প্রফুল্ল নলিনী ব্রক্ষ। তাঁর শ্বাসরুদ্ধকর, অবিশ্বাস্য অভিযানকে রুপালি পর্দায় তুলে আনতে ঐতিহাসিক থ্রিলার নির্মাণ করতে যাচ্ছেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ খ্যাত নির্মাতা দীপংকর দীপন। সিনেমার নাম ‘ছাত্রী সংঘ’। এটি নির্মাতার চতুর্থ সিনেমা।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যায় কুমিল্লার কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের মুক্ত মঞ্চে এক আয়োজনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সিনেমাটির লোগো ও পোস্টার উন্মোচন করা হয়। একই আয়োজনে আত্মপ্রকাশ করল সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘রজত ফিল্মস’। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সুনীতি চৌধুরী, শান্তি ঘোষ ও প্রফুল্ল নলিনী ব্রহ্ম কীভাবে কুমিল্লায় নারী বিপ্লবী দল গঠন করেছিলেন এবং সেই দলের অভিযানের অজানা গল্প তুলে ধরবে ‘ছাত্রী সংঘ’।
চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে নির্মাতা দীপঙ্কর দীপন বলেন, ‘গল্পটা জেনে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ কিছু ছাত্রী মিলে একটা পূর্ণ বিপ্লবী দল গড়ে তুলে এমন একটা অপারেশন করেছিল যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিল অত্যাচারী ব্রিটিশরাজকে। এরকম সশস্ত্র নারী বিপ্লবী দল ভারত উপমহাদেশে আর কোথাও নেই। এই দলকে দেখতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এসেছিলেন কুমিল্লাতে। অথচ এত বড় ঘটনা ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গেছে।’
এসময় দীপন আর ও বলেন, ‘আমি অনেক অনুসন্ধান করে খুঁজে পেয়েছি। এ ঘটনা নিয়ে আমি ইতিহাসের বই লিখব না, আমি একটা গতিশীল টান টান উত্তেজনার সিনেমা বানাতে চাই। কুমিল্লার এই গল্পের সূচনা কুমিল্লায় হওয়াতে আমি খুব আনন্দ বোধ করছি, কুমিল্লার মাটির ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে।’
রজত ফিল্মসের চেয়ারম্যান তুহিন রেজা জানান, কুমিল্লায় এই গল্পের শুরু হয়েছে। এই বিপ্লবী দলকে সম্মান জানাতে কুমিল্লা থেকেই এই সিনেমার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করা হচ্ছে। ‘ছাত্রী সংঘ’ সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন সৌনাভ বসু।
তবে কারা অভিনয় করবেন এই মুহূর্তে তা জানাতে চান না নির্মাতা। শিগগিরই ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিস্তারিত জানাতে চান তিনি। সিনেমায় মূল চরিত্রে কারা অভিনয় করছেন, এ ব্যাপারে এখনো কিছু জানানো হয়নি। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিল্পী ও কলাকুশলী সম্পর্কে জানানো হবে। ঈদুল ফিতরের পরে চিত্রধারণ শুরু হবে। বছরের শেষাংশে চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান নির্মাতা দীপন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান। তিনি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে তুলে আনার এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানান। সমাপনী বক্তব্যে কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, রজত ফিল্মসের এই উদ্যোগের ফলে কুমিল্লার এমন এক ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারবে যার সম্পর্কে দেশের মানুষ জানেন না বললেই চলে। এই যাত্রায় আমরা সবসময় পাশে থাকব।
এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন গবেষক ও সাবেক রিডার জিয়া উদ্দিন ঠাকুর, নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাশিদা আক্তার, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক শিক্ষক ও লেখক শান্তি রঞ্জুন ভৌমিক, বেগম রোকেয়া পদক জয়ী সাংস্কৃতিক কর্মী পাপড়ি বোস ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড: আবু জাফর। তারা সবাই সিনেমাটির গল্পের সঙ্গে কোন না কোনোভাবে যুক্ত।