• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
‘আমি ইয়াসমিন বলছি’

‘ডিবি প্রধান হারুন মিমকে ফোন করে বলেছিলেন, এই ছবি হবে না’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ০২:৩১ পিএম
‘ডিবি প্রধান হারুন মিমকে ফোন করে বলেছিলেন, এই ছবি হবে না’
হারুন অর রশীদ, বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: কোলাজ

দিনাজপুরে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ইয়াসমিনের জীবন নিয়ে ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’  নামে সিনেমা করার কথা ছিল পরিচালক সুমন ধরের। কিন্তু সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের কারণে আর নির্মাণ হয়নি সিনেমাটি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র জনতার তোপের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লে ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে পলাতক সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। এরপরই গণমাধ্যমে মুখ খোলেন পরিচালক সুমন ধর।

পরিচালক সুমন ধর বলেন, ‘ সিনেমাটি ঘোষণা দেওয়ার পরপর আমার কাছে একটি নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন আসে। অপরিচিত নম্বর, তাই ধরেননি। পরদিন আরেকটা নম্বর থেকে ফোন।  শুটিংয়ের ব্যস্ততার কারণে ফোন ধরা হয়নি। পরের দিন আবার ফোন, টেকনিশিয়ান ফোন করছেন ভেবে ফোনটা ধরি। ফোন ধরে বুঝি নায়ক জায়েদ খান ভাই। আগের দিনও তিনি ফোন করেছিলেন।

সুমন ধর বলেন, “ফোন করে জায়েদ ভাই আমাকে বললেন, “আপনাকে আমার সঙ্গে একটু হারুন (ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন প্রধান হারুন অর রশীদ) ভাইয়ের ওখানে যেতে হবে। কেন যেন আপনাকে ডাকছেন। আমি যেহেতু চলচ্চিত্রের মানুষ, তাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। পরদিন আমি গেলাম, কয়েক মিনিটের ব্যবধানে জায়েদ ভাইও ঢুকলেন। দেখলাম, হারুন সাহেব তার রুমে বসা। তার টিমও আছে। সালাম দেওয়ার পর আমাকে প্রশ্ন করলেন, “কী অবস্থা? শুনলাম, আপনি একটা সিনেমা করছেন, আমি ইয়াসমিন বলছি? ” বললাম, হ্যাঁ করছি। তিনি বললেন, “এটা নিয়ে অনেক কথাবার্তা আছে। এই ছবি আসলে করা যাবে না। আমাদের এখানে বড় বড় আরও শক্তিশালী গল্প আছে। ওগুলো আপনাকে দিই, সেখান থেকে করেন।”

নির্মাতা আরও  জানান, “বললাম, এই ছবির পেছনে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। সেই ২০১৭ সাল থেকে লেগে আছি। যেহেতু সত্যি গল্প, সিনেমার মধ্যে যেন সবটুকু সঠিকভাবে উঠে আসে, তার জন্য অনেক গবেষণা করতে হয়েছে। নিজেরও টাকা বিনিয়োগ আছে, প্রযোজকেরও আছে। সবচেয়ে বড় কথা, ছবিটা বানাব বলেই ওই সময় নাটক বানানো কমিয়ে দিই। টুকটাক যে বিজ্ঞাপনচিত্র বানাতাম, তা–ও বন্ধ করে দিই। ছবিটা না হলে অর্থনৈতিকভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব।


হারুন ভাই এটুকু বললেন, এই ছবি করা যাবে না। তিনি যে আমার সঙ্গে খুব রাগী গলায় কথা বলেছেন, তা নয়। এরপর তার সহকারীকে ডেকে বললেন, “আমাদের কাছে ভালো ভালো গল্প আছে, সেগুলো সুমনের সঙ্গে শেয়ার করেন। সুমন যেটা পছন্দ করবেন, সেটা করবেন। আর সুমনের যদি স্পনসর প্রয়োজন হয়, আমরা জোগাড় করে দেব। ”

সুমন ধরের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে আমি ইয়াসমিন বলছির কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিমের সঙ্গেও কথা বলতে চান সাবেক এই ডিবিপ্রধান। এ ঘটনার চার দিন আগে ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন বিদ্যা সিনহা মিম।

সুমন বলেন, “আমাকে বললেন, “মিমকে ফোন করেন। করলাম, পেলাম না। এরপর তিনি সরাসরি ফোন করলেন। মিমকে ফোন করে বললেন, “এই ছবি হবে না, বুঝেছ? ”এরপর দু–এক মিনিট আরও কথা বললেন। আমি সেখানে অনেকক্ষণ বসে রইলাম। এরপর জায়েদ খান আমাকে একটা কথা বলেছিলেন, “শোনো সুমন, তুমি তো ছোট মানুষ। পরিচালনা করো। আমাকে তো হারুন ভাই বলেছিলেন, তোমাকে তুলে নিয়ে আসতে; করিনি। কারণ, তুমি আমার পরিচালক সমিতির সদস্য। হারুন ভাইদের রাগানোও তো ঠিক নয়। তারা কাজের মানুষ। তুমি এ রকম একটা গল্প নিয়ে কেন কাজ করবে? আরও ভালো ভালো গল্প নিয়ে কাজ করবে। আরও অনেক গল্প আছে। ” এসব কথাবার্তা আর ভালো লাগছিল না আমার।”

ডিবি কার্যালয়ে যখন পরিচালক সুমনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, ভারতে তখন ‘মানুষ’ সিনেমার  শুটিংয়ে অভিনেত্রী মিম। সেদিনের স্মৃতিচারণা করে মিম বলেন, “হোয়াটসঅ্যাপে কল দেখে একটু ঘাবড়ে যাই। তিনি (হারুন অর রশীদ) কেন আমাকে ফোন করবেন? ভাবতেও পারিনি যে আমার কাছে এমন একটি ফোনকল সেদিন আসবে আর বলা হবে যে ছবিটিতে অভিনয় করতে পারব না। যখন তিনি বললেন, “তোমার পরিচালক আমার সামনে বসা, ” তখন বুঝতে বাকি থাকেনি যে ছবিটা বোধ হয় আর হবে না। পরিচালক বের হওয়ার পর ফোন করে তা নিশ্চিত হই। সব মিলিয়ে মনটা খুব খারাপ হয়। শিল্পীর জীবনে চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ সব সময় আসে না। আসার পর যখন আবার তা থেকে বঞ্চিত হতে হয়, তখন মন খারাপ হয়।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশীদের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ ছবিটির কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। রোববার দুপুরে ছবির পরিচালক সুমন ধর এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ছবিটি তিনি বানাবেন। সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে।

১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি বাসে করে দিনাজপুরের দশমাইল মোড় এলাকায় নামে ইয়াসমিন আক্তার নামের এক কিশোরী। বয়স আনুমানিক ১৬ বছর। ওই এলাকারই একটি পানের দোকানের সামনে দিনাজপুরগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। সে সময় টহল পুলিশের একটি ভ্যান আসে এবং দিনাজপুরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে একপ্রকার জোর করেই তাকে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে গোবিন্দপুর নামক জায়গায় ওই কিশোরীর লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনা দিনাজপুরের মানুষকে ক্ষুব্ধ করে, রাস্তায় নেমে আসেন তাঁরা, গড়ে তোলেন আন্দোলন। সেই আন্দোলনে আবার গুলি চালায় পুলিশ। সে সময় নিহত হন সাতজন, আহত দুই শতাধিক। এই ঘটনা অবলম্বনেই নির্মিত হবে ‘আমি ইয়াসমিন বলছি।’

এ মুহূর্তে কানাডায় আছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। সেখান থেকে তিনি বলেন, ‘আমি একটা কাজে তখন ডিবি অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানেই শুনি, সুমন ধরকে তুলে আনার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। উপস্থিত সবাই বলছিল, আমি সেই পরিচালককে চিনব। হারুন ভাইও তখন জানতে চাইলেন, চিনি কি না? বললাম চিনি। এরপর সেই পরিচালকের সঙ্গে কথা বলি। পরদিন ডিবি অফিসে যাই। ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ না বানানোর ব্যাপারে পরামর্শ  আমিও দিয়েছি।’

Link copied!