এবার গরমে তিন মাস ধরে পুড়তে পারে ভারত। চলতি এপ্রিল থেকে আগামী জুন পর্যন্ত কয়েকটি রাজ্যে বার বার তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। শুধু তাই নয়, গোটা দেশব্যাপী দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ চলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই তাপপ্রবাহ ফিল্মজগতের ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। অতি গরমে বেশিরভাগ ছবির আউটডোর শুটিং কমে যাবে অথবা বন্ধ রাখা হবে। তারকারা ছাড়াও ফিল্মজগতের সঙ্গে যুক্ত অন্য কর্মীরাও সূর্যের তেজ বাড়তে থাকলে বাইরে শুট করা এড়িয়ে চলেন। আর ফিল্মজগতের ব্যবসার ওপর দেশের জিডিপির অনেকটাই নির্ভর করে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে, গ্রীষ্মকাল না আসতেই গরমে নাজেহাল পশ্চিমবঙ্গ। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি ভারতজুড়ে ২২টি রাজ্যেও তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভারতের আবহাওয়া দপ্তর মৌসম ভবন বলছে, এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে তাপপ্রবাহের যে পরিস্থিতি তৈরি হবে তা টানা ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। অধিকাংশ রাজ্যের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি ছুঁয়ে ফেলতে পারে। পাশাপাশি আরও এক ধরনের তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি লক্ষ করা যেতে পারে ভারতে। কোনও কোনও রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে তাপমাত্রা একই রকম থাকলেও হঠাৎ করে তাপমাত্রার পারদ এক লাফে ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, অতিরিক্ত গরম পড়লে জিডিপি কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যে বছর তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার ১০ বছর পর দেশের জিডিপি ২ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত গরমের ফলে ফসলের উৎপাদনেও বাধা পড়ে। ফসল কম উৎপাদন হলে তারও প্রভাব পড়ে জিডিপির ওপর।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভারতে গম চাষের সময় ৯০ শতাংশ ফসল জমি থেকে কাটা হয়ে যায় এপ্রিল মাসের গোড়াতেই। কখনও কখনও তা এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। কিন্তু এপ্রিলের শুরু থেকেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে কৃষকরা সমস্যার সম্মুখীন হন। তাপমাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ফসল পাকতে দেরি হতে পারে। শুধু কি তাই, তাপমাত্রা বেড়ে গেলে প্রভাব পড়বে লোকসভা নির্বাচনের ওপর। ১৯ এপ্রিল থেকে ভোট শুরু। ভোট গণনা ৪ জুন। তীব্র গরমে যেন ভোটারেরা অসুস্থ হয়ে না পড়েন সে কারণে নির্বাচন কমিশনের তরফে গরমের হাত থেকে বাঁচতে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দাবানলের সৃষ্টি হতে পারে। বিদ্যুৎ এবং জলের সঙ্কটও দেখা দিতে পারে। তবে তাপপ্রবাহের কারণে ভারতের অর্থনীতির ওপর সুপ্রভাব পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ২০৩৭ সাল পর্যন্ত দেশ জুড়ে এতটাই গরম পড়তে পারে যে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বিক্রি হবে। এর ফলে ব্যবসার উন্নতি হবে।
এদিকে, মানুষ যাতে প্রচণ্ড গরমে অস্থির না হয়ে পড়েন, সে জন্য মৌসম ভবন জারি করেছে ‘হিট ওয়েভ অ্যাডভাইসারি’। তাতে বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়েছে, গরম থেকে বাঁচতে কী কী করতে হবে।