বাংলা চলচ্চিত্রের সাদাকালো যুগের নায়ক বুলবুল আহমেদ। অভিনয় জগতে বুলবুল আহমেদ নামে পরিচিতি পেলেও তার জন্মনাম তাবাররুক আহমেদ। সাদাকালো পর্দার অভিনেতা হয়েও তিনি কালের সীমানা পেরিয়ে একাধিক প্রজন্মের মনে রঙিন আলো ছড়িয়েছেন। সুদর্শন নায়ক বলতে যে’কজন সত্তর-আশির দশকে বাঙালি দর্শকের মনজয় করেছেন, তরুণীদের স্বপ্নের পুরুষ হয়েছেন- তাদের অন্যতম বুলবুল আহমেদ। ঢাকাই চলচ্চিত্রে তাকেই প্রথম ‘মহানায়ক’ বলা হয়।
এমনকি ঢালিউডের প্রথম ‘দেবদাস’ও তিনি। প্রখ্যাত এই অভিনেতার আজকের দিনে চির বিদায় নিয়েছিলেন। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন এই তারকা। আজ তার প্রয়াণের ১৩ বছর পূর্ণ হলো।
বুলবুল আহমেদের জন্ম ১৯৪০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার আগামসি লেনে। বাবা-মা তাকে আদর করে বুলবুল বলে ডাকতেন। আর এই নামেই তিনি পরিচিত হন দেশজুড়ে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল এবং নটর ডেম কলেজে। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে কিছুদিন সিলেট এমসি কলেজেও পড়াশোনা করেছেন। সিলেটে এমসি কলেজে থাকাকালে মঞ্চনাটক চিরকুমার সভায় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে উপস্থিত সবার নজর কাড়েন তিনি। পড়াশোনা শেষ করার পর তৎকালীন ইউবিএল ব্যাংক টিএসসি শাখার ম্যানেজার হিসেবে ১০ বছর চাকরি করেন।
চাকরির পাশাপাশিই অভিনয় শুরু করেন বুলবুল আহমেদ। তার অভিনয় জীবন শুরু হয় টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে। আবদুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় ‘বরফ গলা নদী’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। এরপর একে একে তিনি প্রায় চার শতাধিক নাটকে অভিনয় করেন। বাংলা ‘ধীরে বহে মেঘনা’ (১৯৭৩), ‘সূর্য কন্যা’ (১৯৭৫), ‘সীমানা পেরিয়ে’ (১৯৭৭), ‘রূপালী সৈকতে’ (১৯৭৯), ‘মোহনা’ (১৯৮২) ও ‘মহানায়ক’ (১৯৮৪) সিনেমাগুলোতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে মনোযোগ কাড়েন। তবে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘দেবদাস’ সিনেমাটির জন্য।
বুলবুল আহমেদের চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় ১৯৭৩ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) ‘ইয়ে করে বিয়ে’ সিনেমার মাধ্যমে। এই সিনেমায় তার অভিনয় আলোচিত হয়। যার ফলে পরের বছর আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘অঙ্গীকার’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এটিও দারুণ সাফল্য পায়।
ক্যারিয়ারে বুলবুল আহমেদ অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে ‘মহানায়ক’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘সূর্য্য কন্যা’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘জীবন নিয়ে জুয়া’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘বধূ বিদায়’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দি ফাদার’ উল্লেখযোগ্য। তবে বুলবুল আহমেদ বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন যে’কটা সিনেমার জন্য সেগুলো হলো ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘দেবদাস’ ও ‘মহানায়ক’। এই সিনেমাগুলো তাকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়।
শুধু অভিনয়ই নয়, চলচ্চিত্র পরিচালনা করেও সফল হন বুলবুল আহমেদ। তার পরিচালিত ‘ওয়াদা’, ‘মহানায়ক’, ‘ভালো মানুষ’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘আকর্ষণ’, ‘গরম হাওয়া’, ‘কত যে আপন’ সিনেমাগুলো আলোচিত হয়েছে।
অভিনয়ের জন্য বুলবুল আহমেদ চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৭৭ সালে ‘সীমানা পেরিয়ে’, ১৯৭৮ সালে ‘বধু বিদায়’, ১৯৮০ সালে ‘শেষ উত্তর’ ও ‘১৯৮৭ সালে ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ সিনেমার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
ব্যক্তিগত জীবনে ‘মহানয়ক’ বুলবুল আহমেদের স্ত্রী ডেইজি আহমেদ। তিনি একজন অভিনেত্রী। বুলবুল-ডেইজি দম্পতির তিন সন্তান। দুই মেয়ে ঐন্দ্রিলা ও তিলোত্তমা এবং ছেলে শুভ। এরমধ্যে মেয়ে ঐন্দ্রিলা একজন নৃত্যশিল্পী ও নাট্যঅভিনেত্রী। পাশাপাশি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তা।