সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় দীপ্তি চৌধুরীর উপস্থাপনা, ধৈর্য ও বাচনভঙ্গি। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টক শোতে তার ওপর বারবার মেজাজ হারান সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ঘাবড়ে না গিয়ে ধৈর্য ধরে দারুণভাবে সামলে নেন দীপ্তি।
ওই টক শোয়ের একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে দীপ্তিকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন নেটিজেনরা। সেই ছবিতে গালে হাত দিয়ে মুচকি হাসতে দেখা যাচ্ছে দীপ্তিকে।
দীপ্তি বলেন, “সবার মতো আমারও প্রশংসা পেয়ে ভালো লাগছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে যা করি, সেদিনও তা-ই করেছি। অতিথিদের সম্মানের সঙ্গে সেই প্রশ্নটাই করার চেষ্টা করি, যার উত্তর আমার দর্শক শুনতে চান। কারণ, এই অনুষ্ঠানে আমি দর্শকের হয়ে প্রশ্ন করি।”
টু দ্য পয়েন্টের এই পর্ব দিয়ে আলোচনায় এলেও উপস্থাপনায় নতুন নন দীপ্তি। ২০১৬ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন চ্যানেল আইয়ের ‘স্বর্ণ কিশোরী’ নামের একটি অনুষ্ঠান দিয়ে উপস্থাপনা শুরু তার। এরপর চ্যানেলটির তারকা কথনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে দেখা গেছে তাকে।
উপস্থাপনা পেশা নিয়ে দীপ্তির অভিমত, “উপস্থাপনা একটি বুদ্ধিবৃত্তিক পেশা। এখানে আত্মোন্নয়নের দিকে বেশি জোর দিতে হয়। নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা বাড়াতে পড়াশোনা করতে হয়। আমি সব সময় পোশাক, সাজসজ্জার চেয়ে ভেতরের প্রস্তুতিতে বেশি জোর দিই। আমি যার ইন্টারভিউ করছি, তার সম্পর্কে ভালো করে জানাকে বেশি গুরুত্ব দিই। ভবিষ্যতে উপস্থাপনার মাধ্যমে যেন ইতিবাচকতা ছড়াতে পারি এবং মানুষের জন্য কিছু করতে পারি, সেটাই প্রত্যাশা।”
ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমে জড়িত দীপ্তি। অংশ নিয়েছেন আবৃত্তি, বিতর্ক, গান ও মঞ্চ অভিনয়ে। বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কারও জিতেছেন। লেখালেখিতেও দক্ষতা আছে দীপ্তির। ২০২১ সালে প্রকাশ হয় তার প্রথম বই ‘দীপ্ত কৈশোর’। তার লেখা দ্বিতীয় বই ‘বাধা যত উপড়ে ফেলো’। জাতিসংঘের ফুড সিস্টেম সামিটে ২০২১ সালে ইয়ুথ লিডার হিসেবে যুক্ত ছিলেন দীপ্তি। এখন যুক্ত আছেন অ্যাক্ট ফর ফুড নামের প্রজেক্টে। এটি পুরো বিশ্বে ফুড সিস্টেম ট্রান্সফরমেশন নিয়ে কাজ করে। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন দীপ্তি।
এ ছাড়া দীপ্তি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক করছেন।
চলতি বছরে বাংলাদেশের ১০০ সদস্যের তরুণ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে ভারত সফরে গিয়েছিলেন এই উপস্থাপিকা। এছাড়া সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, আফ্রিকার কেনিয়াসহ নানা দেশে বাংলাদেশের তরুণ প্রতিনিধি হিসেবে ঘুরে এসেছেন।
‘টু দ্য পয়েন্ট’ নামের এই রাজনৈতিক টক শোর উপস্থাপকের চেয়ারে বসার আগে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেন—এমন প্রশ্নের জবাবে দীপ্তি চৌধুরী বলেন, “আমরা কেউ রাজনীতির বাইরে না। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সব সময় রাজনীতির খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করি। উপস্থাপকের চেয়ারে বসে আমি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করি। সাধারণ মানুষের যে জায়গায় ধোঁয়াশা আছে, সেই জায়গাটি পরিষ্কার করার চেষ্টা করি।”
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দীপ্তি বলেন, “আমি উপস্থাপনাকে উপভোগ করি। এর ফলে দেশের শিল্প-সংস্কৃতি, রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অনেক বড় মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে, তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি। তাছাড়া আমি মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। সে বিষয়টি মাথায় রেখে আমার পড়াশোনা, লেখালাখি এবং উপস্থাপনা তথা মিডিয়া ক্যারিয়ারকে এক সুতোয় গাঁথতে চাই। বাকি অনেক কিছু তো সময় বলে দেবে।”