চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববির বিরুদ্ধে গুলশানে ফিল্মি স্টাইলে ভবনের ফ্লোর দখলের অভিযোগ উঠেছে। তার ঘনিষ্ট আবুল বাশারের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশানে একটি বাণিজ্যিক ভবনের ফ্লোর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, চিত্রনায়িকা ববি প্রশাসন ও তার মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে গুলশানের ‘ওয়াইএন সেন্টার’ এর ষষ্ঠ তলার ফ্লোর দখলের জন্য হামলা-মামলাসহ নানান কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। এ বিষয়ে থানায় মামলা করলেও এখনও কোন প্রতিকার মিলছে না।
ভুক্তভোগীরা বলেন, গুলশান-২ এর ১১৩ নাম্বার সড়কের ৬/এ ‘ওয়াইএন সেন্টার’ এর একটি ফ্লোর দখলের অভিযোগে থানায় মামলা হবার পরেও বহাল তবিয়তে দখল ধরে রেখেছেন অবৈধ দখলদাররা। দখলে থাকা এই ফ্লোর উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
মঙ্গলবার ভবনে সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে চিত্রনায়িকার সংবাদ সম্মেলন এবং অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ভবনের মালিক শাহিনা ইয়াসমিনের আইনজীবী ব্যারিষ্টার খালেদ মাহমুদুর রহমান (আদনান) ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলেন, রাজধানীর বিলাসবহুল ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত ওয়াইএন সেন্টারের লেভেল- ৬ ফ্লোরটি শাহিনা ইয়াসমিন জনৈক আমান উল্লাহ আমান নামক একজনের কাছে ভাড়া দেন। মালিক ও ভাড়াটিয়ার উভয় পক্ষের চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে গত ২৩ মার্চ আমান উল্লাহ আমান সেখানে একটি রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন। তবে ব্যবসায় মন্দাভাব চলে আসার এক পর্যায়ে তিন মাসের ভাড়া এবং সার্ভিস চার্জ বকেয়া পড়ে। এসময়ে তাকে ভাড়া পরিোশধের জন্য মালিকপক্ষ থেকে চিঠিও দেওয়া হয়। তবে আমান উল্লাহ আমান ভাড়া পরিশোধ করে না এবং চুক্তি ভঙ্গ করে এবং মালিকপক্ষকে অবহিত না করে গত মে মাসে তার রেষ্টুরেন্টের আসবাবপত্র চিত্রনায়িকা ববি ও তার সহযোগি বাশারের নিকট বিক্রি করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ৮ মে ভাড়াটিয়া আমানের পক্ষে আবুল বাশার ও চিত্রনায়িকা ববি হঠাৎ করেই ভবনের ম্যানেজার জয়নাল আবেদীন ওরফে জয় এর নিকট বকেয়া এক মাসের ভাড়া দেন। জয়নাল আবেদীন চিত্রনায়িকা ববির অনুরোধে তার নাম লিখে রিসিট কেটে টাকা গ্রহণ করেন। তবে এসময়ে চিত্রনায়িকা ভবনের সার্ভিস চার্জ দেননি।
ওই রিসিটের উপর ভিত্তি করে আবুল বাশার বিভিন্ন সময়ে ভবনে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন এবং বিভিন্ন অজুহাতে ভবনের অন্যান্য ফ্লোরের ভাড়াটিয়া, নিচের সিকিউরিটি গার্ডস, মালিকপক্ষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন বলে অভিযোগ উঠে।
এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ১৩ জুন এবং ১৪ জুন আবুল বাশারের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। উভয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ১৫ জুন সবপক্ষকে থানায় ডাকেন মিমাংশার উদ্দেশ্যে। বিবাদমান একটি পক্ষের পাশাপাশি মালিক পক্ষ নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে থানায় উপস্থিত হলেও আবুল বাশার এবং চিত্রনায়িকা ববি অনুপস্থিত ছিলেন।
তিনি জানান, গত ২২ জুন প্রকৃত ভাড়াটিয়া আমান উল্লাহ আমান তার ব্যাক্তিগত প্যাডে ভবন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানান, ভাড়াটিয়া হিসেবে ফ্লোরটির দখল তার নিজের কাছে নেই এবং তিনি দখল পুনরুদ্ধার করতে ভবনের মালিকপক্ষ ও ভবন সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট আবেদন করেন। মালিক পক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আমান তার ভাড়ায় নেওয়া ফ্লোরে অবস্থিত রেস্টুরেন্টের প্রধান ফটকের তালা পরিবর্তন করেন এবং ২৩ জুন রেস্টুরেন্টের দখল পুনরুদ্ধার করেন। তবে ওইদিন দুপর ১২টা দিকে ভবনে এসে আবুল বাশার একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতে ভবনের মূল ফটকে তালা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে ভবন সংশ্লিষ্ট লোকজনসহ ভবনের আশেপাশের লোকজন প্রতিবাদ করলে বাশার পালিয়ে যান।
তিনি বলেন, এর কিছুক্ষণ পরেই আবুল বাশার এবং চিত্রনায়িকা ববি আবার ভবনের সামনে আসেন এবং ভবনের মূল ফটকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ফেলেন এবং ভেতরে প্রবেশ করেন। এসময়ে মালিকপক্ষ ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে পুলিশ, বাশার, নায়িকা ববিসহ উপস্থিত সকলে ভবনের ওই ফ্লোরে যান এবং পুলিশের উপস্থিতিতেই আবুল বাশার ভবনের ম্যানেজার জয়নাল আবেদীন ওরফে জয়কে এবং এজিএম সাকিব উদ দোজাকে আক্রমণ করেন। এসময়ে তাদেরকে রক্তাক্ত করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিনই গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ভবনের এজিএম সাকিব। ওই মামলায় আবুল বাশার ও চিত্রনায়িকা ববিকে আসামি করা হয়। এর কেয়ক ঘণ্টা পরে আবুল বাশার এর ভাই আব্বাস বাদী হয়ে একই থানায় একটি মামলা করেন। এত ভবনের মালিক শাহিনা ইয়াসমিন ও তার পুত্র জাওয়াদ আলিফ আল মামুনসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।
ব্যারিষ্টার খালেদ ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, গত ২৮ জুন ভবনের এজিএম এর দায়ের করা মামলার ১৩ নাম্বার আসামি আব্বাস এবং চিত্রনায়িকা ববির লোকজন সকাল ৯ টার দিকে সন্ত্রাসী বাহিনীসহ হঠাৎ ভবনে প্রবেশ করে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করেন এবং ভবনের সাবস্টেশন রুম, জেনারেটর রুম এবং মেইন গেটে তালা মারেন। ভবনে উপস্থিত মালিক পক্ষের কর্মচারীরা তাৎক্ষণিক পুলিশে খবর দেয়। কিন্ত পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরপরই আবুল বাশার তার বাহিনী নিয়ে আবারো ভবনে প্রবেশ করেন এবং সিসি ক্যামেরার সকল ক্যাবল কেটে দেন এবং ষষ্ঠ তলায় রেস্টুরেন্টের মূল ফটকের তালা ভাঙেন ও রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করে রেস্টুরেন্টের ভেতরে আমান উল্লাহ আমানের মালিকানাধীন অনেক মালামাল নিয়ে যান। ভবনের সিসি ক্যামেরা বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আবুল বাশার ভবনের অফিস কক্ষে ঢুকে নগদ পাঁচ লাখ টাকাও লুট করেন।
এদিকে আবুল বাশারের ভাইয়ের করা মামলায় ভবনের মালিকসহ অন্যান্যরা উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেন। গত ৩০ জুন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ হতে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন লাভ করেন তারা।