দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরেছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন। রোববার (১০ নভেম্বর) সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরেন। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে বিগত সরকারের আমলে পেশাগত কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার।
তবে বিদেশে থাকলেও গান মিস করেননি এই সংগীতশিল্পী। গান নিয়ে বেবী নাজনীন বলেন, ‘বিদেশে আমি কিন্তু গানের সঙ্গেই ছিলাম। আমেরিকা, ইউরোপে বড় বড় কনসার্ট করেছি। সেখানে কেউ আমাকে গান করতে বাধা দেননি। তবে হ্যাঁ, দেশে থাকলে হয়তো নতুন অনেক গান করতে পারতাম, সেটা হয়নি। বাংলাদেশের শ্রোতারা বঞ্চিত হয়েছেন আমার গান থেকে। বিদেশে থেকে আমি দলীয় কার্যক্রমও পরিচালনা করেছি। বলতে গেলে, সব সময় কাজের মধ্যেই থাকতাম। যার কারণে গান অতটা মিস করিনি।’
দেশে এসে নতুন করে গান করার কথা ভাবছেন বেবি নাজনীন। তিনি বলেন, “আমি যে স্ট্যান্ডার্ড মেইটেন করি, সে রকম গান পেলে গাইতে সমস্যা নেই। গত আট বছরে আমার অনেক গান তৈরি হয়েই আছে। দেশে না থাকার কারণে সেগুলোতে কণ্ঠ দিইনি। এবার তো দেশে ফিরলাম। দেখি ধীরে ধীরে গানগুলো কণ্ঠে তুলব, একের পর এক প্রকাশও করব। শিগগিরই গানে ফিরছি ইনশাআল্লাহ।”
দেশে ফেরার অনুভূতি জানাতে গিয়ে এই গায়িকা বলেন, “সত্যি বলতে, তৃপ্তি পেয়েছি। ঢাকায় পা রাখার পর মনে হয়েছে, সত্যিকারের স্বাধীনতা পেলাম। একজন মানুষকে বিনা কারণে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন রেখে যখন দেশের বাইরে থাকতে হয়, তার চেয়ে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। দেশে ফেরার ইচ্ছা থাকলেও ফিরতে পারিনি এত দিন।”
এ বছরই বেবি নাজনীনের মা না-ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এরপরও দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। গায়িকা বলেন, “সন্তান হিসেবে এর চেয়ে অসহায়ত্বের আর কী হতে পারে? এখন মনে হচ্ছে মুক্তি পেয়েছি। মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে পারছি। এই অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।”
সাড়ে চার দশকের ক্যারিয়ারে আধুনিক সংগীতের অর্ধ শতাধিক একক অডিও অ্যালবামসহ অসংখ্য দ্বৈত অডিও অ্যালবামে গান গেয়েছেন বেবি নাজনীন। ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আশা ভোঁশলে, বাপ্পি লাহিড়ী, কুমার শানু, কবিতা কৃষ্ণামূর্তির সঙ্গেও একাধিক অডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশেষ শ্রেণির তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন চলচ্চিত্র, অডিও মাধ্যমে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন।
‘মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে’, ‘আমার একটা মানুষ আছে’, ‘ওই রংধনু থেকে’, ‘পত্রমিতা’, ‘এলোমলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল’, ‘কাল সারা রাত ছিল স্বপনেরও রাত’, ‘দু’চোখে ঘুম আসে না’, ‘আমার ঘুম ভাঙাইয়া গেল রে মরার কোকিলে’, ‘লোকে বলে আমার ঘরে নাকি চাঁদ উঠেছে’, ‘আজ পাশা খেলবো রে শাম’, ‘প্রিয়তমা’, ‘সারা বাংলায় খুঁজি তোমারে ও বন্ধু তুমি কই কই রে.. এ প্রাণো বুঝি যায় রে’- এমন অসংখ্য গানের মাধ্যমে বাংলা গানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছেন এই সংগীতশিল্পী।