বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা। যিনি সারাটা জীবন শুধু অভিনয়কে ভালোবেসে অভিনয়টাই করে গেছেন। তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন এদেশের সকল শ্রেণীর দর্শক। মাত্র আট বছর বয়স থেকে কিছুদিন আগে অসুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দেশ বরেণ্য এই ভীষণ গুনী অভিনেত্রী নিয়মিত অভিনয় করে গেছেন।
ক্যামেরার সামনেই যেন থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন তিনি। কিন্তু কিছুদিন আগে স্ট্রোক করায় তার একমাত্র মেয়ে অভিনেত্রী মুক্তি ও তারই মেয়ে কারিমা’র সেবায় ডাক্তারদের যথাযথ চিকিৎসায় এখন মোটামুটি অনেকটাই সুস্থ। তিন বছর আগে আনোয়ারার স্বামী মারা যায়। যে কারণে পরিবারের পুরো দায়িত্ব এখন মুক্তির উপরই। গল্পে গল্পে জানা যায় কিংবদন্তী এই অভিনেত্রী নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তার অসাধারন অভিনয়ের জন্য।
যেখানে নানান সময়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে নানান ধরনের অভিযোগ উঠে, একজন আনোয়ারার ক্ষেত্রে তা সবসময়ই সুবিচার হয়েছে বলেই সবাই বলেছেন। ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘ প্রীত না জানে রীত’, ‘১৩ নং ফেকু ওস্তাদাগার লেন’,‘ কাগজের নৌকা’,‘ শহীদ তিতুমীর’,‘ বাঁশরী’,‘ দেবদাস’, ‘ সুন্দরী’,‘ এতিম’,‘ জন্ম থেকে জ¦লছি’,‘ দুই পয়সার আলতা’,‘ সবুজ সাথী’,‘ গোলাপী এখন ট্রেনে’,‘ ভাত দে’, ‘নসীব’,‘ শুভদা’, ‘নসীব’সহ এমন অসংখ্য জনপ্রিয়-দর্শক সমাদৃত সিনেমায় অভিনয় করেছেন আনোয়ারা।
তার পুরোটা জীবনই অভিনয়ে সমৃদ্ধ। দেশের নানান অঙ্গনের শিল্পীদের এ বছরও একুশে পদকে ভুষিত করা হয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় অনেক যোগ্য শিল্পীরা বাদ পড়েছেন। বাদ পেড়েছেন আনোয়ারাও। কী নিয়মে কীসের উপর বিচার করে একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক দেয়া হয় তার স্পষ্ট কোনো ব্যাখা না থাকলেও এ বছরও যারা জীবদ্দশায় একুশে পদক পেলেন তাদের অনেকের চেয়ে যোগ্যতায় আনোয়ারা অনেক অনেক এগিয়ে।
কেন এমন দেশ বরেণ্য কিংবদন্তী গুনী অভিনেত্রী বিশেষত একুশে বা স্বাধীনতা পদক’প্রাপ্তি থেকে এখনো বাদ পড়ে আছেন তা বোধগম্য নয়। তবে এ নিয়ে আনোয়ারার কোনো দুঃখ বোধ নেই। আনোয়ারা বলেন,‘ এক জীবনে শুধু অভিনয় করেই এদেশের কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। কোথাও বের হলে এখনো মানুষ যেমন শ্রদ্ধা করে তেমনি ভালোবাসে। এই ভালোবাসার কোনো প্রতিদান হয়না। আমার কর্ম জীবনে প্রত্যেক শিল্পীর সঙ্গেই আমার সু-সম্পর্ক ছিলো। আমার অসুস্থার সময় সবাই খোঁজ নিয়েছেন। আমি খুশী।’
আনোয়ারার মেয়ে মুক্তি বলেন,‘ দর্শক হিসেবে আমি আমার অভিনয়ের ভক্ত আর সন্তান হিসেবে তার সন্তান হিসেব আমি অবশ্যই গর্বিত। এমন মায়ের সন্তান আমি যাকে বাংলাদেশের মানুষ যেমন সম্মান করেন ঠিক তেমনই ভালোবাসেন। একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক নিয়ে আম্মার বা আমাদের কারো কোনো দুঃখ বা কষ্ট নেই। রাষ্ট্র যাকে যোগ্য মনে করেন তাকেই সম্মান দিবেন।’