নির্মাণের প্রায় এক যুগ পর আসছে বেগম খালেদা জিয়ার বায়োপিক নিয়ে সিনেমা ‘আপসহীন’। এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। ২০১৩ সালে সিনেমাটি নির্মাণ করেছিলেন প্রয়াত কিংবদন্তি গীতিকার-প্রযোজক ও পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
দুইবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বায়োপিক এটি, পারিপার্শ্বিক কারণে তখন এই তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। সিনেমায় খালেদা জিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার, আর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নায়ক হেলাল খান। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর এবার আলোর মুখ দেখতে চলেছে সিনেমাটি।
জানা গেছে, ‘আপসহীন’ ২০১৩ সালের নভেম্বরে শুটিং শুরু করে ডিসেম্বরেই শেষ হয়। পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ সম্পন্ন হলে সেন্সরে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন হেলাল খান। তার আগেই গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিএনপির এই কর্মী। তিনি ছিলেন দলের সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের নেতা। পরিকল্পনা ছিল, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (৫ জানুয়ারি) আগে ছবিটি সারা দেশে মুক্তি দেওয়ার। হেলাল খান জেলে থাকায় তা হয়নি। গাজী মাজহারুল আনোয়য়ার ‘আপসহীন’ মুক্তির কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। এরই মধ্যে গাজী মাজহারুল আনোয়ার মারা গেলেন।
অভিনেতা হেলাল খান জানান, ‘সিনেমাটি নিয়ে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতেই ছবিটি শিগগির মুক্তি দিতে চাই ‘আপসহীন’। তার আগে অবশ্যই বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে একবার দেখা করব। ম্যাডাম অসুস্থ। তিনি সুস্থ হলেই ছবিটি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করব। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই হবে।’
হেলাল খান আরো বলেন, “মাঝখানে প্রায় পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে। তাই ছবিটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন-পরিমার্জন করতে হবে। কিছু দৃশ্য হয়তো নতুন করে শুটিং করব। কিছু দৃশ্য সম্পাদনা করে বাদ দেওয়া হবে। এ জন্যও কিছু দিন সময় লাগবে। আশা করছি, এই বছরই দর্শকদের সিনেমাটি দেখাতে পারব।’
এদিকে ‘আপসহীন’ সিনেমায় যুক্ত হওয়ার নেপথ্যের কথা জানিয়েছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ। তিনি এই সিনেমায় বেগম খালেদা জিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ব্যক্তিজীবনে এই অভিনেত্রী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক। নিপুণ বলেন, ‘একদিন গাজী মাজহারুল আনোয়ার আঙ্কেল আমার বাসায় আসেন। ছবিটির কথা জানালেন। তখন শাহ আলম কিরণ ভাইয়ের ‘৭১-এর মা জননী’ ছবির শুটিং চলছে। আমাকে আঙ্কেল বললেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়ার জীবনী নিয়ে ‘আপসহীন’। আমাকে তাঁর চরিত্রেই রূপদান করতে হবে। জানতে চাইলেন, আমার আপত্তি আছে কি না। জানালাম, অভিনেত্রী হিসেবে ম্যাডামের চরিত্রে অবশ্যই অভিনয় করা উচিত। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে রাজপথে সরব। আমি রাজি হওয়ায় আঙ্কেল খুব খুশি হলেন।
জানালেন, আমার আগে জয়া আহসান ও নুসরাত ইমরোজ তিশার কথা উঠেছিল। তবে গাজী আঙ্কেলই হেলাল ভাইকে বলেছিলেন, নিপুণ হলে ম্যাডামের চেহারার সঙ্গে দারুণ মিলবে।’ শুটিংয়ের আগে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে অনেক পড়াশোনাও করেছেন নিপুণ। গাজী মাজহারুল আনোয়ারই তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন। নিপুণ বলেন, “আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আঙ্কেলের (গাজী মাজহারুল আনোয়ার) প্রতি। আজ তিনি বেঁচে নেই, তবে তাঁর সৃষ্টি আছে। আশা করছি, হেলাল ভাই দ্রুত ছবিটি মুক্তি দেবেন। আমিও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করব।”
‘আপসহীন’ নির্মাণের আগে অনেক দিন ধরে চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। বেশ কয়েকবার বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও ছবিটি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। অভিনেতা ও ছবির প্রযোজক হেলাল খানের সঙ্গে দিন-রাত এক করে কাজ করেছিলেন—জানালেন প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সন্তান সরফরাজ আনোয়ার উপল। তিনিও চান দ্রুত ছবিটি মুক্তি পাক।