মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণাকে ২০২১ সালে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। স্বামী কামরুল হাসান জুয়েলের করা মামলায় গ্রেফতারের পর সেসময় গণমাধ্যমে যা এসেছিল তার পুরোপুরি উল্টো ঘটনা ঘটেছিল বলে দাবি করেছে এই অভিনেত্রী। জুয়েলের কথা না শোনায় মিথ্যা মামলা সাজিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান ডিবি হারুন অর রশীদদের প্রভাব খাটিয়ে গ্রেফতার করেছিল বলেও দাবি করেছেন রোমানা স্বর্ণা।
এই বিষয়ে সোমবার (২ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন এ অভিনেত্রী। মিথ্যা মামলায় অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণার কারাভোগের প্রতিবাদে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
রোমানা স্বর্ণা বলেন, এক বন্ধুর মাধ্যমে জুয়েলের সঙ্গে পরিচয়ের পর ২০১৯ সালে বিয়ে হয়। আমার ক্যারিয়ারে যখন সুসময় তখন বিয়ে করি জুয়েলকে। তবে বিয়ের পরই পারিবারিক দ্বন্দ্ব এক পর্যায়ে গড়ায় মামলায়। আগের বউয়ের কথা গোপন রেখে বিয়ে করে। এসব জানার পর বৈবাহিক জীবনে নেমে আসে অশান্তি ও নির্যাতন। একটা পর্যায়ে তার সঙ্গে ঘর না করার সিদ্ধান্ত নেই। নির্যাতনের জন্য কয়েকবার সাধারণ ডায়েরি করেও লাভ হয়নি। বিয়ের আগে বলেছিল অভিনয় করলে অসুবিধা নেই। কিন্তু বিয়ের পর আমাকে অভিনয় করতে দেয়নি।
তিনি বলেন, বিয়ের পর মায়ের বাসায় থাকতাম। একবার আমার প্রথম ঘরের সন্তানকে শুটিং থেকে অপহরণ করে। আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় হুমকি দিতো। দুই বার তাকে ডির্ভোস দিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমাকে ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে হয়রানি করে। ডির্ভোস তুলে নিলে মামলা তুলে নেবে এমন শর্তও দেওয়া হয়।
স্বর্ণা অভিযোগ করে বলেন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন জুয়েলের অপকর্ম করতে সহযোগিতা করতো। তাই উপায় না থাকায় একটা পর্যায়ে সমঝোতা করি। মামলা তুলে নেই। প্রথম ডিভোর্সের পর কিছুদিন ভালো গেলেও দ্বিতীয়বার ডির্ভোস দিলে আমাকে আটকানোর জন্য মিথ্যা মামলা দেয়। আমি যেন অভিনয় করতে না পারি, কাউকে মুখ দেখাতে না পারি। সেজন্য আমাকে গ্রেফতার করানোর জন্য ডিবি হারুনকে মোটা অংকের অর্থ দিয়েছিল বলে জানতে পারি। দেড় মাস জেলে থাকার পর ডির্ভোস দিতে পারবো না সেই শর্তে জামিন করায়।
পরিবারের কথা চিন্তা করে এই শর্তে রাজি হই। ডিভোর্স চলাকালীন ভয় ভীতি দেখিয়ে নতুন করে কাবিন ছাড়াই বাসায় এসে থাকতো জুয়েল। দেড় বছর গৃহবন্দি করে রাখে আর সন্তান পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। পরিবারের কথা ভেবে এতদিন সহ্য করেছি। জেল থেকে ফেরার পর জানতে পারি জুয়েল সৌদি গেছে। সেই সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করে আমি সেখানে চলে যাই। তার আগে পড়াশোনার জন্য ছেলেকে পাঠাই। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছি জেনে জুয়েল নানাভাবে আমাকে হুমকি দেয়। দেশে আমার পরিবার থাকায় তাদের নানাভাবে হুমকি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও রেহাই পাইনি।
স্বামীর ক্ষমতার বিষয়ে অভিনেত্রী স্বর্ণা বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান, প্রয়াত ফজলে রাব্বী মিয়া, ডিবি হারুন জুয়েলকে সহযোগিতা করতো। আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতো। সেই টাকা জুয়েলের মাধ্যমে সৌদি পাচার করতো। জুয়েল মূলত হুন্ডির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। হারুনের টাকাও জুয়েলের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হতো। জুয়েল আমার দ্বিতীয় স্বামী। তবে আমার নামে মামলাসহ ২৮টি বিয়ে করার কথা রটানো হয়েছিল, যেগুলো ভিত্তিহীন। এই বিয়েগুলোর প্রমাণ আজও দিতে পারেনি। আমাকে যেভাবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল তারও প্রমাণ দিতে পারেনি।
স্বর্ণা বলেন, নানা হুমকি দিত তাই এতোদিন কিছু বলতে পারিনি। সরকার পতনের পর দেশে এসেও কিছু দিন অসুস্থ থাকায় এই বিষয়ে কথা বলিনি। এখনো কোনও মামলা করিনি। তবে শীঘ্রই এই বিষয়ে সবাই জানতে পারবে।