হত্যাচেষ্টা মামলার আসামির তালিকায় সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নিপুণসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম মঙ্গলবার প্রকাশ্যে এসেছে।
গত সোমবার আদালত তাদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। একই দিনে অভিনয়শিল্পী সিদ্দিকের ওপর হামলা করে লাঞ্ছিত করার পর ঢাকার রমনা থানায় সোপর্দের ঘটনাও ঘটেছে।
এই নয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের নতুন সভাপতি ও জনপ্রিয় অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম মুখ খুলেছেন।
দক্ষ এই অভিনেতা বলেন, এভাবে মামলা দেওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ দরকার। সরকারিভাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা।
আজাদ আবুল কালাম বললেন, ‘ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, সবাইকে মামলার মধ্যে ফেলতে হবে। ৩০০-৪০০ জন মামলার আসামি, এটা অবাস্তব একটা অবস্থা।
একজন সুবর্ণা মুস্তাফার মতো শিল্পী রাস্তায় গিয়ে মানুষকে গুলি করবে? যে মানুষটি মামলা করেছেন, তিনি আন্দোলনের সময় আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন; তিনি মামলা করেছিলেন অনেক লোকের নামে। মামলার নথিতে শিল্পীদের অনেকের নাম দেখলাম, তারা রাস্তায় নেমে মানুষকে গুলি করবে!’

আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের মেয়াদে অনেক শিল্পীকে তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। কেউ কেউ নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলেন। বিষয়টি মনে করে আজাদ আবুল কালাম বললেন, ‘শিল্পীরা হয়তো কখনো কখনো সরকারের পক্ষে কথা বলেছে। সেখানে তার রাজনৈতিক একটা পরিচয় থাকতেই পারে। তার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা থাকতেই পারে। এরা কিন্তু সরিও বলেছে।
বেশির ভাগকেই দেখেছি গণ-অভ্যুত্থানের সময় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে, মানুষের পক্ষে কথা বলেছে। শিল্পীরা তো স্বাভাবিকভাবে মানুষের পক্ষে কাজ করা মানুষ। শিল্পীদের এভাবে ঢালাওভাবে মামলায় ফেলে, একের পর এক মামলা দিয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করা এবং তাদের জীবনকে নিরাপত্তাহীনতার চাদরে মুড়ে দেওয়া, এটা অদ্ভুত রকমের সংস্কৃতি।
এর মধ্যে ইরেশ যাকেরকেও মামলার আসামি করতে দেখলাম! অথচ ইরেশ যাকের আমাদের সঙ্গে সেই জুলাই মাস থেকে রাস্তায়। এভাবে মামলা দেওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ দরকার।
সরকারিভাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা। নিরুৎসাহিত করা। মামলা যিনি করছেন, যদি প্রমাণিত হয়, শিল্পীরা কেউই গুলি করেনি, তখন তো এটা মিথ্যা মামলা হবে। এ রকম মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে, যিনি শিল্পীদের নামে মামলা করেছেন, তার কী শাস্তি হবে, সেটার বিধান থাকতে হবে।’
ঢালাওভাবে মামলায় শিল্পীদের সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হচ্ছে মনে করছেন আজাদ আবুল কালাম। তিনি বললেন, ‘হত্যা মামলার আসামি বলে যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে, তাতে হঠাৎ করে মনে হবে, শিল্পীরা বুঝি মানুষ মেরে ফেলেছে! এখন দেখছি আবার অর্থের জোগানদাতাও বলা হচ্ছে।
আরে, এই শিল্পীদের কার কী অর্থ আছে, তা আমাদের ভালো করেই জানা আছে। কোথায় অর্থের জোগান দেবে, তা–ও আমাদের জানা আছে। কার কী সামর্থ্য, আমাদের জানা আছে না? শিল্পীরা এত টাকা কোথায় পাবে যে টু কিল পিপল। এটা কী ধরনের অবান্তর কথা! এটার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রেরও শক্ত অবস্থান নেওয়া উচিত। রাষ্ট্রের জানিয়ে দেওয়া উচিত, এসব মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে উল্টো তারা কঠিন শাস্তি পাবে।’
আজাদ আবুল কালাম বললেন, ‘কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা জানানোর একটা প্রক্রিয়া আছে। শুধু শিল্পী না, একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনি তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত তাকে অপরাধী বলতে পারেন না। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে পারেন না।
মামলা করে দিলেন এবং তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা শুরু করলেন, এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, এটাই যদি আমাদের মনস্তত্ত্ব হয়, তাহলে বিভক্তি আরও বাড়বে। আমরা যে ইনক্লুসিভ সমাজের কথা বলছি বা চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান মানুষকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছে, যে আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছে, সেই একটা ইনক্লুসিভ সমাজে বিভেদ থাকবে না, সমঝোতার জায়গা তৈরি হবে সমাজে; এমনটা চলতে থাকলে সেটা কীভাবে হবে? এভাবে চলতে থাকলে তো বিভক্তি আরও বাড়বে। চলতে থাকবে, চলতে থাকবে। যা ঘটছে, প্রতিটা কাজই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।’