‘সারাদিন পিয়ানোয় প্রবীণ আঙ্গুলগুলি খেলা করে/বহুদিন আগে তিনি এসেছেন আমাদের এ শহরে’—কবীর সুমন এই গান গেয়েছিলেন ভি বালসারার জন্য! সেই গানে ভি বালসারাই পিয়ানো বাজাচ্ছিলেন। এরকম দুর্লভ ঘটনা উপমহাদেশে কম হয়। সাধারণত লিজেন্ডদের সম্মান দেওয়া হয় মৃত্যুর পর। ভি বালসারা আরও তো হতভাগা, যে বাংলা গানের জন্য তিনি বোম্বে থেকে কলকাতায় এসেছিলেন সেই শহরেই তার নামে রাস্তাঘাট নাই কিছু। পাননি পদ্মশ্রী বা পদ্মবিভুষণ ধরনের কোনো কিছু। ২০০৫ সালের এই দিনে বৃদ্ধ হতে হতে একদিন হারিয়ে যান। আজ তার জন্মদিন।
ভি বালসারা যে বাংলায় এসে কাজ করবেন এটা ভাবতেই এখন বিস্ময় লাগে। একটা পার্সি ছেলে দুইটা শার্ট নিয়ে বোম্বে থেকে কলকাতায় এসে কাজ করছে। আগে এসব হতোই, কলকাতা তখন সত্যিকারের কালচারাল ক্যাপিটাল। এসেই তিনি কাজ করলেন আচার্য জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের সাথে। সবাই তখনকার গীতিকার-সুরকার-শিল্পীদের কথাই বলে কিন্তু গানের যন্ত্রানুষ্ঙ্গের আমূল পরিবর্তন আনেন ভি বালসারা। তিনি অনেকগুলো বাদ্যযন্ত্র যেমন বাজাতে জানতেন, তেমন জানতেন পরিমিতিবোধ। ইউটিউবে দেখবেন ভি বালসারা সঙ্গে হেমন্তের ভিডিও আছে, কি প্রাণবন্ত পরিবেশনা তার।
অথচ স্বস্তি ছিল না জীবনে তার। সন্তান অল্পবয়সে মারা গেছে। অকালে চলে গেছেন স্ত্রীও। তিনি মনেপ্রাণে সংগীত নিয়েই বেঁচেছেন। আর প্রিয় ছিল ক্রিকেট, টেস্টম্যাচ মাঠে বসে দেখতেন। বোম্বেতে ছিল তার একটা ছিমছাম কর্মজীবন। তা বাদ দিয়ে তিনি অক্ষুর দত্ত লেনের এই বাঙালি জীবনকেই বেছে নিয়েছিলেন। আট-দশটা বাঙালির চেয়ে তিনি বেশি বাঙালি। রবীন্দ্রনাথকে মনেপ্রাণে ঈশ্বর মানতেন। পংকজ কুমার মল্লিক ছিল তার গার্জিয়ান আর সলিল চৌধুরী বন্ধু। সলিল চৌধুরী খুব ভালোবাসতেন ভি বালসারাকে। ভারতীয় ক্লাসিকাল থেকে পশ্চিমের অর্কেস্ট্রেশন সব নিয়েই ছিল তার বিপুল বোঝাপড়া। ছেলেমেয়েদের শেখাতেন। শরীরচর্চা করতেন। একটা নিরীহ ভদ্রস্থ বাঙালী জীবন পার করতে করতেই একাকী মৃত্যুবরণ করেন। অনেকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাকে নিয়ে আর কিছুই হয়নি।
আমি বাড়ি ফিরতে ফিরতে শুনছিলাম তার ইনস্ট্রুমেন্টাল। টানা শুনেই গেলাম সারাটা পথ। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি এই গুণীকে।