সুভাষ দত্তের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৪, ১১:৪৩ এএম
সুভাষ দত্তের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
নির্মাতা সুভাষ দত্ত। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সুভাষ দত্তের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার (১৬ নভেম্বর)। ২০১২ সালের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।

সুভাষ দত্তকে ১৯৫৯ সালে ‘মাটির পাহাড়’ সিনেমায় আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেই বছরই সুভাষ দত্ত নিজেকে চলচ্চিত্রের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত করেন। পরিচালক এহতেশামের ‘এ দেশ তোমার আমার’ সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন একটি কমেডি চরিত্রে। তার অভিনীত সিনেমা ‘হারানো দিন’ (১৯৬১) দারুণ ব্যবসাসফল হয়।

অভিনয়ে মাত করে দিলেও সুভাষ দত্তের মাথায় তখনও সিনেমা নির্মাণের চিন্তা। তিনি বুঝতে পারেন, নির্মাতার হাতের পুতুল হয়ে সৃজনশীল কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারবেন না। মাথায় তখন খেলা করছিল ১৯৫৭ সালে দেখা সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ সিনেমার গ্রামের সেই চমৎকার দৃশ্যধারণগুলো। গ্রামে কীভাবে বর্ষা আসে, তার গতির যে উপস্থাপন ছিলÑ সেটা তখনও অভিভূত করে সুভাষ দত্তকে। তাই সিনেমা নির্মাণে হাত দেন।

১৯৬৩ সালে কবরীকে নিয়ে শুরু করেন কাজ। ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায় তার নির্মিত প্রথম সিনেমা ‘সুতরাং’। প্রশংসিত হন আন্তর্জাতিক মহলে।

এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই প্রতিভাধর নির্মাতাকে। মুক্তিযুদ্ধের আগে ১৯৬৮ সালে মুক্তি পায় ‘আবির্ভাব’। এই সিনেমার কাহিনি লেখেন জহুরুল হক এবং প্রশান্ত নিয়োগী। ১৯৭০ সালে নির্মাণ করেন আরেক জনপ্রিয় সিনেমা ‘বিনিময়’, যেখানে বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন কবরী। বিপরীতে ছিলেন উজ্জ্বল। বিশেষ চরিত্রে দেখা যায় নির্মাতাকে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যে কজন নির্মাতা স্রোতের বিপরীতে হেঁটেছেন, তৈরি করেছেন নিজস্ব পথ- তাদের মধ্যে সুভাষ দত্ত অন্যতম। তার নির্মিত একেকটি সিনেমা প্রজন্মের পর প্রজন্মে দিয়ে যাচ্ছে অনুপ্রেরণা। গল্পের ভাঁজে ভাঁজে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন দেশ, সমাজ ও মানুষের সমস্যা, সংকট আর চেনা বাস্তবতার প্রেক্ষাপট। তার কাছে বাণিজ্যের চেয়ে চলচ্চিত্র ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তার নির্মিত সিনেমাগুলোতে সেই ছাপ স্পষ্ট।

সুভাষ দত্ত নির্মিত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘সুতরাং’, ‘কাগজের নৌকা’, ‘আয়না ও অবশিষ্ট’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘আবির্ভাব’, ‘বলাকা মন’, ‘সবুজ সাথী’, ‘বসুন্ধরা’, ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘নাজমা’, ‘স্বামী-স্ত্রী’, ‘আবদার’, ‘আগমন’, ‘শর্ত’, ‘সহধর্মিণী’, ‘সোহাগ মিলন’, ‘পালাবদল’, ‘আলিঙ্গন’, ‘বিনিময়’, ‘আকাক্সক্ষা’, ‘আমার ছেলে’ ইত্যাদি।

সুভাষ দত্ত জন্মেছিলেন ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের মুনশিপাড়ায়। সেখানে তার মামার বাড়ি। পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলার চকরিতে। তবে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের নিজ বাড়িতে। তার ডাকনাম ছিল পটলা। 

নির্মাতা হিসেবে বিখ্যাত হলেও সুভাষ দত্তের অভিনয় জীবনটাও উল্লেখযোগ্য। মঞ্চ নাটকের নিবেদিত ব্যক্তি ছিলেন তিনি। অভিনয় করেছেন বহু সিনেমায়। 

সুভাষ দত্ত অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘রাজধানীর বুকে’, ‘সূর্যস্নান’, ‘চান্দা’, ‘তালাশ’, ‘নতুন সুর’, ‘রূপবান’, ‘মিলন’, ‘নদী ও নারী’, ‘ভাইয়া’, ‘আখেরি স্টেশন’, ‘সোনার কাজল’, ‘দুই দিগন্ত’, ‘সমাধান’ প্রভৃতি।

সুভাষ দত্ত ১৯৭৭ সালে ‘বসুন্ধরা’ সিনেমার জন্য পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এই সিনেমাটি সে বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মোট পাঁচটি বিভাগে সেরা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। 

ব্যক্তিগত জীবনে সুভাষ দত্ত বিয়ে করেছিলেন সীমা দত্তকে। ১৯৫৪ সালে তারা বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০০১ সালে সীমা দত্ত মারা যান। তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক।

Link copied!