প্রতিবছরের মতো এ বছরও বিশ্বের সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ২০২৪ সালের এই তালিকায় জলবায়ুকর্মী, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিনোদন ও ক্রীড়া, রাজনীতি ও অ্যাডভোকেসি এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি- এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১০০ জন নারীকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
এ বছর এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন শোবিজ অঙ্গনের ১১ জন নারী তারকা।
শ্যারন স্টোন, অভিনেত্রী, যুক্তরাষ্ট্র
আমেরিকান এই অভিনেত্রীর খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন তিনি।
পর্দা ও বাস্তব দুই জীবনেই তিন দশকের বেশি সময় ধরে মানবসেবায় কাজ করে যাচ্ছেন গোল্ডেন গ্লোবজয়ী অভিনেত্রী। অভিনয়ের বাইরে তিনি এইডস আক্রান্ত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে।৬৬ বছর বয়সী শ্যারনকে সর্বশেষ পর্দায় দেখা গেছে এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া ‘হোয়াট অ্যাবাউট লাভ’ ছবিতে। বর্তমানে তার হাতে আছে ‘নোবডি ২’ ও ‘ইন মেমোরিয়াম’ ছবি দুটি।
ম্যাডিসন টেভলিন, সঞ্চালক ও মডেল, কানাডা
শারীরিক দৈর্ঘ্যে তিনি ছোট, যেটাকে প্রচলিত ভাষায় বলে বামন। তবে প্রতিভায় নন পিছিয়ে। এ বছর তার একটি ভিডিও ক্যাম্পেইন ভাইরাল হয়েছিল ইন্টারনেটে। যেটার মূল বার্তা ছিল, ‘আমরা বামনরাও পারি।’ বিশ্বজুড়ে ক্যাম্পেইনটির ইতিবাচক প্রভাবও পড়ে বেশ।
নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে ফিচার করা হয় এ অভিনেত্রী ও মডেলকে। জনপ্রিয় টক শো ‘হু ডু ইউ থিংক আই এম?’ ও ‘২১ কোয়েশ্চেন পডকাস্ট’ সঞ্চালনা করেছেন তিনি।
রেই , সিংগার-সংরাইটার, যুক্তরাজ্য
আসল নাম র্যাচেল আগাথা কিন। তবে সংগীত দুনিয়ায় তিনি পরিচিত রেই নামে। এই ব্রিটিশ সিংগার-সংরাইটারের বয়স মোটে ২৭। এরই মধ্যে গানে তার বেশ প্রভাব। পপ, আরঅ্যান্ডবি ও জ্যাজ গানে মাতিয়ে যাচ্ছেন শ্রোতাদের। গত বছর প্রকাশিত হয় তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম ‘মাই টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি ব্লুজ’। শ্রোতা-সমালোচকের প্রশংসার পাশাপাশি ছয়টি বিভাগে এটি জিতে নেয় ব্রিটস অ্যাওয়ার্ড। হন প্রথম নারী ‘সংরাইটার অব দ্য ইয়ার’। জীবনে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন রেই; কখনো যৌন নিগ্রহ, কখনো ড্রাগ অ্যাবিউজ তো কখনো মানসিক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে।
ক্লোয়ে ঝাঁও , চলচ্চিত্র নির্মাতা, চীনা বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ
জন্মেছেন বেইজিংয়ে, শৈশবে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। ২০২০ সালে ‘নোম্যাডল্যান্ড’ নির্মাণ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন বিশ্ব সিনেমায়। জিতে নিয়েছেন সেরা নির্মাতার অস্কার। অস্কারে সেরা ছবির পুরস্কারও পেয়েছিল ‘নোম্যাডল্যান্ড’। ইতিহাসে তৃতীয় নারী নির্মাতা হিসেবে এ সম্মান পেয়েছেন তিনি। এখন বানাচ্ছেন শেকসপিয়রের ‘হ্যামলেট’।
ফিরদা মারসিয়া কুরনিয়া, মিউজিশিয়ান, ইন্দোনেশিয়া
লিঙ্গ ও ধর্মের সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ করাই যেন ইন্দোনেশিয়ান এই তরুণীর কাজ। হিজাব পরেই গাইছেন হেভি মেটাল, বাজাচ্ছেন গিটার। ‘ভয়েস অব বেসপ্রট’-এর গায়ক ও গিটারিস্ট তিনি। ইংরেজি ও ইন্দোনেশিয়ার সান্দানিজ ভাষায় গান করেন। হেভি মেটাল গান করতে গিয়ে ধর্মীয় নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। তবে ১০ বছর ধরে অবিরাম লড়ে এসেছেন। এ বছর বিখ্যাত ‘গ্লাস্টনবারি’তে প্রথম ইন্দোনেশিয়ান ব্যান্ড হিসেবে পারফরম করেছে ফিরদার দল।
হেন্দ সাবরি, অভিনেত্রী, তিউনিসিয়া
আরবের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ১৯৯৪ সালের নারীবাদী ছবি ‘দ্য সাইলেন্স অব দ্য প্যালেস’-এ অভিনয় করে পরিচিতি পান তিউনিসিয়ার এই অভিনেত্রী। প্রথম আরব নারী হিসেবে ২০১৯ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ বছর তাকে দেখা গেছে ‘ফোর ডটারস’-এ, যেটা তিউনিসিয়া থেকে অস্কারের জন্য পাঠানো হয়েছে। এই নভেম্বরে তাকে শুভেচ্ছাদূত নিযুক্ত করে জাতিসংঘ।
নেইওমি ওয়াতানাবে, কমেডিয়ান, জাপান
জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার। নতুন প্রজন্মের কৌতুকশিল্পী হিসেবে দেশটিতে দারুণ জনপ্রিয় তিনি। কমেডি জগতে পুরুষাধিক্যের এই সময়ে নিজের আলাদা ছাপ রেখে চলেছেন। তিনি বডি শেমিং বন্ধেও কাজ করছেন নিয়মিত। জাপানে তিনিই প্রথম এমন ব্র্যান্ড চালু করেছেন, যেখানে ‘প্লাস’ সাইজের পোশাক বিক্রি হয়।
গ্যাবি মোরিনো’ ল্যাটিন-পপ মিউজিশিয়ান, গুয়েতেমালা
লাতিন আমেরিকার সংগীতমহলে জনপ্রিয় নাম গ্যাবি মোরিনো। গুয়েতেমালার এই শিল্পী ২০২৪ সালে গ্র্যামিতে সেরা লাতিন পপ অ্যালবামের পুরস্কার জিতেছেন। তার গানে নিজের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ছাপ স্পষ্ট। মোরিনো প্রথম গুয়েতেমালার নাগরিক, যিনি ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হয়েছেন।
ইলাহা সুরুর, সিংগার-সংরাইটার, আফগানিস্তান
একটা সময় ছিল, আফগানিস্তানের নারীরা প্রকাশ্যে জোরে কথাও বলতে পারত না। সেই রুদ্ধ পরিবেশের দেশেই গানের মতো শক্তিশালী হাতিয়ার বেছে নিয়েছেন ইলাহা সুরুর। নিজেই লিখে গেয়েছেন ‘নান, কার, আজাদি’
। ২০০৯ সালে ‘আফগান স্টার’ প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়ে সামনে আসেন ইলাহা। পরের বছরই পড়েন বাধার মুখে, অগত্যা ছাড়তে হয় দেশ। বর্তমানে লন্ডনভিত্তিক ব্যান্ড ‘কেফায়া’র হয়ে গান করেন তিনি।হাদিকা কিয়ানি, সিংগার-সংরাইটার, পাকিস্তান
পাকিস্তানি সংগীতের অন্যতম জনপ্রিয় কণ্ঠ হাদিকা কিয়ানি। বৈচিত্র্যময় গায়কি ও মানবিক বিষয়ে তার অসামান্য অবদান বরাবরই প্রশংসিত। নব্বইয়ের দশকেই পরিচিতি পান হাদিকা, হয়ে ওঠেন দক্ষিণ এশিয়ার পপ মিউজিকের নামি শিল্পী। হয়েছেন জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূতও। ২০২২ সালে পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যায় ‘বাসিলা-ই-রাহ’ প্রকল্প চালু করেন তিনি, যেখান থেকে বেলুচিস্তান ও দক্ষিণ পাঞ্জাবের বন্যার্তদের সহযোগিতা করা হয়। বন্যার্তদের জন্য ৩৭০টি ঘর ও অন্যান্য সুবিধা দিয়েছেন হাদিকা।
নোয়েলা উইয়ালা নুয়াদি, পপ মিউজিশিয়ান, ঘানা
শ্রোতাদের কাছে ‘উইয়ালা’ নামেই পরিচিত তিনি। ঘানার এই সংগীতশিল্পী মনে করেন, গানের মাধ্যমে তিনি নিজের ভাবনা-দর্শন ও সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলেন। ব্যতিক্রম ফ্যাশনের জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিতি পেয়েছেন। উত্তর ঘানার ঐতিহ্যবাহী নানা পোশাক ও গয়না পরেই গান করেন উইয়ালা। আফ্রিকান নারীদের ওপর চলমান শোষণের বিরুদ্ধে তিনি একের পর এক গান রচনা করে চলেছেন। পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘের হয়েও কাজ করছেন অনেক দিন ধরে।