• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মিথিলা!


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২, ০৫:৪৪ পিএম
ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মিথিলা!

রাফিয়াত রশিদ মিথিলা দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। মিথিলা বর্তমানে অভিনয়ের বাইরেও ব্যস্ত আছেন ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্টের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে। সম্প্রতি সেই দায়িত্ব পালন কালে উগান্ডায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর)সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভয়ংকর সেই অভিজ্ঞতার কথা জানান মিথিলা। অফিশিয়াল কাজের ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, ফিল্ড ভিজিট সম্পন্ন করে পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে পৌঁছান তিনি। সেখানকার কাজ শেষ করে ভারতের কলকাতায় ফেরার জন্য বিমান ধরার আগ মুহূর্তে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়।

ভৌগলিক কারণে সিয়েরা লিওনের রাজধানী আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। আর কাজ শেষে ফেরার সময় কীভাবে বিপদে পড়েছিলেন, সেই অভিজ্ঞতাই জানিয়েছেন মিথিলা।

অভিনেত্রী লিখেছেন, “আমি সাধারণত আমার অফিশিয়াল ট্রিপ থেকে সুন্দর ছবিগুলোই শেয়ার করি। আর তাই দেখে অনেকেই আহা-উহু করতে করতে বলে, ‘ইশ, আমারও যদি এরকম একটা জব থাকতো... আপনি কত ঘুরে বেড়ান...আহা’। এই সুন্দর ছবির পেছনের অভিজ্ঞতাটা তাদের জন্য শেয়ার করছি। গত দুই সপ্তাহ আমি উগান্ডায় বিভিন্ন রকম ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, ফিল্ড ভিজিট শেষ করে উগান্ডা থেকে ওয়েস্ট আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে আসি এখানকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটা আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করতে। আমার কর্মশালা গতকাল শেষ হয় এবং গতকাল রাতেই আমার সিয়েরা লিওন থেকে কলকাতায় যাবার ফ্লাইট ছিল। আয়রাকে যেহেতু বাড়িতে রেখে এসেছি, কাজের বাইরে আর একদিনও আমার থাকতে ইচ্ছা করে না বাইরে। তো যাই হোক, কালকে বিকালবেলা থেকেই প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি। সিয়েরা লিওনের রাজধানী, ফ্রি টাউন, আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। সিয়েরা লিওনের এয়ারপোর্টটা ফ্রি টাউন থেকে দূরে একটা বিচ্ছিন্ন জায়গায় অবস্থিত, যার নাম ‘লুংগি’।”

তিনি আরও লিখেন, “ফ্রি টাউন থেকে ১ ঘণ্টা একটা ছোট ফেরিতে আটলান্টিক পার হয়ে লুংগি এয়ারপোর্টে যেতে হয়। ঝড়-বৃষ্টির কারণে আমি একটু বেশিই চিন্তিত ছিলাম। কারণ আমার সমুদ্র যেমন ভালো লাগে, তেমনি উত্তাল সমুদ্র ভয়ও লাগে৷ আমার ফেরি, যেটাকে ‘sea coach’ বলা হয়, সেটার টাইম ছিল রাত ২টায়। আমি সন্ধ্যা থেকে আশায় ছিলাম যে আবহাওয়া রাতে হয়তো ভালো হবে। কিন্তু যত রাত বাড়ছে ততই ঝড়ও প্রকট আকার ধারণ করছে। শেষ পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে রাত ১টায় ‘sea coach’ টার্মিনালে গেলাম। লোকজন খুবই কম। আমার ফ্লাইট ছিল ভোর ৫.৩০টায়, সিয়েরা লিওন থেকে মরক্কোর কাসাব্লানকায়। সেখান থেকে দুবাই হয়ে কলকাতায় ফেরার কথা। যাহোক, তার আগে তো সমুদ্রটা পাড়ি দিতে হবে।”

মিথিলা লিখেন, “রাত ২টায় যখন ‘sea coach’ এ উঠে বসলাম তখন বোট ভীষণভাবে দুলছিল। তারপর মাঝ সমুদ্রে যাওয়ার পর দুলুনির সঙ্গে সঙ্গে মাথাটাও ঘুরতে শুরু করল। বিশাল বিশাল পানির ঝাপটা আসছিল। মনে মনে বিভিন্ন ধরনের দোয়া পড়তে পড়তে ঘড়িতে সময় যেন এগোচ্ছিলই না! শেষ পর্যন্ত ১ ঘণ্টাকে ১ জীবন ভাবার আগ মুহূর্তে ফেরি ওপাড়ে পৌঁছাল। ফেরি থেকে নেমে টার্মিনাল অব্দি বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে যেতে যেতেই ভেজা কাক হয়ে গেলাম। তারপর একটা বাস এ চড়ে লুংগি এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে বাজলো ভোর ৪টা। তারপর ইমিগ্রেশনের বহু কসরত শেষ করে প্লেন এ উঠতে গিয়ে আরেকটু ভিজলাম। কারণ, বাসে করে রানওয়ের কাছাকাছি গিয়ে প্লেনে উঠার সময় অবশ্যই কোনো ছাতার ব্যবস্থা ছিল না। যাক ওই ঝড়ের মধ্যে সমুদ্রে ডুবে না গিয়ে প্লেন পর্যন্ত যে যেতে পেরেছি সেটাই চৌদ্দ গুষ্টির ভাগ্য মনে হচ্ছিল!”

অভিনেত্রী আরও যুক্ত করেন, “আমার ফ্লাইটটা ছিল ‘এয়ার মারোক’, যেটা লাইবেরিয়ার রাজধানী ‘মনরোভিয়া’ হয়ে কাসাব্লানকা যাবে। এই বিষয়টা আফ্রিকায় খুব কমন যে, একটা প্লেন লোকাল বাসের মতো মাঝখানে দু-একটা যায়গায় থেমে যাত্রী তুলবে আর নামাবে। এই সময়ে বাকি যাত্রীদের কিন্তু প্লেন থেকে নামতে হবে না। প্লেনেই বসে থাকবে। তো মন্রোভিয়াতে ঘণ্টা-খানেক থামাসহ সব মিলিয়ে ৮ ঘণ্টার মতো জার্নি করে দুপুর ২টায় কাসাব্লাংকায় পৌঁছানোর পর আরেক বিপদ হলো। আমার কাসাব্লাংকা থেকে দুবাইয়ের ফ্লাইটটা আমি মিস করলাম। এবার পরের ফ্লাইট আছে পরের দিন, আর এদিকে কাসাব্লাংকায় এয়ারপোর্টে কোনো হোটেল নেই, আর বাইরে ভিসা ছাড়া বের হওয়া যাবে না (অন আরাইভাল ভিসা বাংলাদেশিরা পাবে না)। তো আমি আমার অফিসে যোগাযোগ করে টার্কিশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বুক করালাম, যেটা বিকেলে ছাড়বে কিন্তু ঢাকায় যাবে। শেষ পর্যন্ত টার্কিশে চড়ে রাত ১টায় ইস্তানবুল পৌঁছানোর পর দেখলাম আমার ইস্তানবুল থেকে ঢাকায় যাবার ফ্লাইটটাও সাড়ে ৫ ঘণ্টা ডিলেইড! তো আপাতত আমি ইস্তানবুল এয়ারপোর্টে ঘুম চোখে এই রচনাটি লিখছি। আচ্ছা এর মধ্যে আমার লাগেজটা যে কোন ফ্লাইটে কোথায় চলে গেছে সেটা কিন্তু আমি এখনো জানিনা, জানার চেষ্টা করারও শক্তি নেই।”

সর্বশেষে মিথিলা লিখেছেন, “এই গল্পটা তাদের জন্য লিখলাম যারা শুধু সুন্দর ছবিগুলোই দেখে, তার পেছনের কঠিন সময়ের গল্পগুলো জানে না। এই যে গত তিন সপ্তাহ ধরে, মেয়েকে বাড়িতে রেখে, হাজার হাজার মাইল বিভিন্ন দেশে, শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে, জার্নি করে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করা, সেটা নিতান্তই জীবিকার তাগিদে; আমোদ-ফুর্তির জন্যে না। সব সময় সুন্দর ছবি আর ভালো কথাগুলো শেয়ার করি, কারণ আমি যা কিছু ভালো, আর পজিটিভ সেটাই ভাগ করে নিতে চাই। একজন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্মী হিসেবে আমার কাজ এবং বিভিন্ন দেশে ব্র‍্যাকের কন্ট্রিবিউশান নিয়ে আমি ভীষণ গর্ববোধ করি। তাই পেছনের কঠিন সময়গুলোকেও অভিজ্ঞতা হিসেবেই দেখি। যাইহোক, আরও কম  হলেও ১২ ঘণ্টার মতো জার্নি বাকী আছে। সব মিলিয়ে কত ঘণ্টা হলো সেটা হিসাব করার মানসিক অবস্থা আপাতত নাই। আমি দোয়া প্রার্থী।”

Link copied!