বাংলা নাটক ও চলচ্চিত্রের গুণী অভিনেত্রী ডলি জহুর। ক্যারিয়ারে অসংখ্য চরিত্রে নৈপুণ্যের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে পর্দায় মা চরিত্রেই বেশি দেখা যায় তাকে। মা হিসেবে সাবলীল অভিনয় দিয়ে দর্শক হৃদয় জয় করেছেন এ গুনী অভিনেত্রী।
কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর আজ ৬৭তম জন্মদিন। রোববার (১৭ জুলাই) জীবনের আরেকটি বসন্ত পার করে পা দিয়েছেন ৬৮ বছর বয়সে তিনি। জন্মদিনে সামাজিক মাধ্যমে সবার ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন ডলি জহুর।
ডলি জহুর ১৯৫৫ সালের ১৭ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সময় মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ১৯৭৪-৭৫ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একটি নাটকে অভিনয় করেন ডলি জহুর। এরপর নাট্যচক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মঞ্চে প্রথম ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নাটকে অভিনয় করেন তিনি।
১৯৭৬ সালের ৫ নভেম্বর তিনি ঘর বাঁধেন জহুরুল ইসলামের সঙ্গে। স্বামীর সঙ্গে যুক্ত হন কত্থক নাট্যগোষ্ঠীতে। মামুনুর রশীদের বাংলা থিয়েটারের প্রযোজনা ‘মানুষ’ নাটকেও অভিনয় করেন। আরণ্যক নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মঞ্চে ‘ময়ূর সিংহাসন’ ও ‘ইবলিস’ নাটকেও অভিনয় করেন তিনি।
১৯৮৫ সালে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও মোস্তাফিজুর রহমান প্রযোজিত বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথম ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকে নিলু ভাবি চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।
ডলি জহুর অভিনীত ধারাবাহিক নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘শেষ পত্র’, ‘চুপি চুপি’, ‘বাঘা শের’, ‘স্ক্যান্ডাল’, ‘নোয়াশাল’, ‘মামলাবাজ’, ‘ক্ষণিকালয়’, ‘দহন’, ও ‘গপ্পো’ ইত্যাদি। এছাড়া তিনি কয়েক শতাধিক একক নাটকে অভিনয় করেছেন।
সিনেমায় ডলি জহুরের অভিষেক হয় ‘অসাধারণ’ দিয়ে। এরপর তিনি হুমায়ূন আহমেদের ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘আগুণের পরশমণি’ সিনেমাগুলোতে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসিত হন। এছাড়াও তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে- ‘দেশপ্রেমিক’, ‘বিক্ষোভ’, ‘আঞ্জুমান’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘বিচার হবে’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘কুলি’, ‘আমার মা’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘শুধু তুমি’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ইত্যাদি।
১৯৯২ সালে ‘শঙ্খনীল কারাগার’-এ রাবেয়া চরিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ডলি জহুর। এরপর ২০০৬ সালে ‘ঘানি’ চলচ্চিত্রে দারিদ্র্যপীড়িত নারী রোকেয়ার চরিত্রে মর্মস্পর্শী অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-চরিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেন তিনি।