শেষ হলো ৯ দিনব্যাপী ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে এই উৎসবে এবার প্রদর্শিত হয় ৭০টি দেশের ২২৫টি চলচ্চিত্র।
রোববার (২৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে ইতি টানা হয় চলচ্চিত্রের এই মহাযজ্ঞের। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের সিনেমাকে ঘিরেই ছিল দর্শকদের ভিড়।
রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে মূল মিলনায়তনে অতিথি, জুরি ও বিভিন্ন দেশের নির্মাতা, প্রযোজকদের উপস্থিতিতে ঘোষণা করা হয় বিজয়ী ছবি, তথ্যচিত্র, নির্মাতা, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও চিত্রগ্রাহকের নাম। এ আয়োজনে প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফিপ্রেসি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক মফিদুল হক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সমাপনী আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। এসময় উৎসবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।
এবার শ্রেষ্ঠ শিশু চলচ্চিত্র বাদল রহমান পুরস্কার পেয়েছে রাশিয়ান চলচ্চিত্র ‘আফ্রিকা’। চলচ্চিত্রটির নির্মাতা দারিয়া বিনেভস্কায়া। স্পেশাল অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র ‘সেমখোর’। চলচ্চিত্রটির নির্মাতা এমি বড়ুয়া। শ্রেষ্ঠ অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড যৌথভাবে পেয়েছে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’ ও নুরুল আলম আতিক নির্মিত ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’।
এছাড়া বাংলাদেশ প্যানারোমা জুরি সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘আজব কারখানা’। চলচ্চিত্রটি নির্মাতা শবনাম ফেরদৌসী। আধ্যাত্মিক চলচ্চিত্র বিভাগে সেরা ফিচার ফিল্মে পুরস্কার পেয়েছে চায়নার চলচ্চিত্র ‘ইয়াংজেনের জার্নি’, যার নির্মাতা চেংজু ল্যান। বেস্ট ডকুমেন্টরি পুরস্কার পেয়েছে ইরানের চলচ্চিত্র ‘নানে মগদাস’, যার নির্মাতা রহিম জাবিহি। সেরা শর্টফিল্ম হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে তুর্কির চলচ্চিত্র ‘ফাতমা কায়চি’ নিন বিলিনমেয়েন হিকায়েসন্’। শর্ট ফিল্মটির নির্মাত ওরহান তেকেওগ্লু।
এবার মহিলা চলচ্চিত্র নির্মাতা বিভাগে বেস্ট ফিচার ফিল্মের পুরস্কার পেয়েছে ইরানের চলচ্চিত্র ‘শাহরবানু। চলচ্চিত্রটির নির্মাতা মরিয়ম বাহরলোলুমি। বেস্ট শর্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ফ্রান্সের ‘এ সামার প্লেস’। চলচ্চিত্রটির নির্মাতা আলেকজান্দ্রা ম্যাথিউ। বেস্ট ডকুমেন্টারি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে জার্মানি ফিনল্যান্ডের চলচ্চিত্র ‘জোয়েন তোয়েসেলা পুওলেন’। এটির নির্মাতা অ্যান্টোনিয়া কিলিয়ান।
এশিয়ান চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে ভারতের 'কুজাংগাল' (পেবেলস), ছবিটির পরিচালক পিএস বিনোথারাজ। সেরা সিনেমাটোগ্রাফি ঝাউ ওয়েনকাও চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার পেয়েছে চায়নার চলচ্চিত্র ‘ক্যাফে বাই দি হাইওয়ে’, যার নির্মাতা শি জিয়াওফান। সেরা স্ক্রিপ্ট রাইটার হয়েছেন ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী এবং সুগত সিনহা; বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘মায়ার জঞ্জাল’ চলচ্চিত্রটির জন্য। এর নির্মাতা ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী। সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন সুসান পারভা, ইরান ও কানাডার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘বোটক্স’ চলচ্চিত্রের জন্য। চলচ্চিত্রটির নির্মাতা কাভেহ মাজাহেরি। সেরা অভিনেতা হয়েছেন জয়সূর্য, ভারতের ‘সানি’ চলচ্চিত্রের জন্য। সিনেমাটির নির্মাতা রঞ্জিত শংকর। সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন নেপালের সুজিত বিদারি, তার চলচ্চিত্র ‘আইনা ঝিয়াল কো পুতালি’।
এবারের উৎসবে এশিয়ান ফিল্ম কম্পিটিশনে ২১টি, রেট্রোস্পেকটিভে ৫টি, ট্রিবিউটে ২টি, বাংলাদেশ প্যানোরমাতে ৯টি, ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে ৬টি, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ডে ৪৭টি, উইমেন ফিল্মমেকারস সেকশনে ২৭টি, স্পিরিচুয়াল সেকশনে ২৯টি, চিলড্রেন ফিল্ম সেশনে ১৮টি, শর্ট অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম সেকশনে ৬১টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।
এ বছর নতুন একটি শাখা খোলা হয় ‘ওয়াইড অ্যাঙ্গেল’ নামে। মূলত মেধাবী নির্মাতাদের ছবি দেখাতে করা হয় এই বিভাগ। এই শাখায় দেখানো হয় জার্মানপ্রবাসী বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকার শাহীন দিল-রিয়াজের ছয়টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। উদীয়মান চলচ্চিত্রকারদের সহযোগিতা করতে তৈরি করা হয় ‘ওয়েস্ট মিটস ইস্ট স্ক্রিনপ্লে ল্যাব’। এবার ১১টি প্রকল্প স্থান পায়। সেখান থেকে তিনটি প্রকল্পকে পুরস্কার দেওয়া হয়। আর ১১ জনকে নিয়ে হয় চার দিনের কর্মশালা।
উৎসবে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চ, জাতীয় চিত্রশালা ও জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ছবি প্রদর্শিত হয়।