নির্বাসনে থেকেও দেশে বরাবরই আলোচনায় থাকেন তসলিমা নাসরিন। ভারতে থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন ইস্যুতে সরব থাকেন এই নারীবাদী লেখিকা।
সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন ফেলে তাঁর বিভিন্ন বিস্ফোরক মন্তব্য আর কাণ্ডকীর্তি। সপ্তাহ খানেক আগেই ঢালিউড নায়িকা পরীমনির মা হওয়ার খবরে ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। পরীর নাম উল্লেখ না করেও আত্মনির্ভর নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার কি প্রয়োজন এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সেসময় তসলিমা লিখেছেন, “সন্তান জন্ম দেওয়ার এত দরকার কেন? মেয়েরা, এমনকী প্রতিষ্ঠিত, সমাজের নানা নিয়ম ভেঙে ফেলা সাহসী মেয়েরাও, ৩০ পার হলেই সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এই ব্যাকুলতা কতটা নিজের জন্য, কতটা পুরুষতান্ত্রিক রীতিনীতি মানার জন্য? আমি কিন্তু মনে করি নিজের জন্য নয়, মেয়েরা সন্তান জন্ম দিতে চায় সমাজের ১০টা লোকের জন্য। বাল্যকাল থেকে শুনে আসা, শিখে আসা ‘মাতৃত্বেই নারীজন্মের সার্থকতা’ জাতীয় বাকোয়াজ মস্তিস্কে কিলবিল করে বলেই মনে করে ইচ্ছেটা বুঝি নিজের।”
সন্তান নিলে কাজের সময় নষ্ট হয়য় উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছিলেন সন্তান জন্ম দেয়াতে কাজের সময় নষ্ট হয় বলে মনে করেন তসলিমা। “যারা মূল্যবান কাজ করছে জীবনে, আমার মনে হয় না তাদের উচিত অহেতুক শিশু জন্ম দিয়ে কাজের সময় নষ্ট করা। লালন-পালনেই তো ব্যয় হয়ে যায় জীবনের অনেকটা সময়।”
এবার বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া মা হওয়াতেও চটেছেন লেখিকা। এবার কর্মব্যস্ত নারীকেও ছাড় দেননি তিনি।
শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) রাতে ইনস্টাগ্রামে নিজের অনাগত সন্তানের খবর দেন প্রিয়ঙ্কা। জানা গেছে,নিজের গর্ভে নয় বরং বৈজ্ঞানিক উপায়ে সারোগেসি বা অন্য নারীর গর্ভে বড় হচ্ছে নিক জোনাস আর প্রিয়াংকার সন্তান।
যথারীতি কারো নাম উল্লেখ না করেই প্রিয়াঙ্কাকে উদ্দেশ্যে করে তসলিমা লিখেছেন, “গৃহহীন স্বজনহীন কোনও শিশুকে দত্তক নেওয়ার চেয়ে সারোগেসির মাধ্যমে ধনী এবং ব্যস্ত সেলিব্রিটিরা নিজের জিনসমেত একখানা রেডিমেইড শিশু চায়। সারোগেসি বিজ্ঞানের চমৎকার একটা আবিস্কার বটে।”
সারোগেসির মাধ্যমে ধনীরা গরীবদের ব্যবহার করছে এমন ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেছেন, “...সারোগেসি ততদিন টিকে থাকবে, যতদিন সমাজে দারিদ্র টিকে থাকবে। দারিদ্র নেই তো সারোগেসি নেই। দরিদ্র মেয়েদের জরায়ু টাকার বিনিময়ে ন'মাসের জন্য ভাড়া নেয় ধনীরা। ধনী মেয়েরা কিন্তু তাদের জরায়ু কাউকে ভাড়া দেবে না। কারণ গর্ভাবস্থায় জীবনের নানা ঝুঁকি থাকে, শিশুর জন্মের সময়ও থাকে ঝুঁকি। দরিদ্র না হলে কেউ এই ঝুঁকি নেয় না।”
আর এই পদ্ধতিতে রেডিমেড শিশু ঘরে আনা হয়য় উল্লেখ করে বলেন, “গৃহহীন স্বজনহীন কোনও শিশুকে দত্তক নেওয়ার চেয়ে সারোগেসির মাধ্যমে ধনী এবং ব্যস্ত সেলিব্রিটিরা নিজের জিনসমেত একখানা রেডিমেইড শিশু চায়। মানুষের ভেতরে এই সেলফিস জিনটি , এই সেলফিস নার্সিসিস্টিক ইগোটি বেশ আছে। এসবের উর্ধে উঠতে কেউ যে পারে না তা নয়, অনেকে গর্ভবতী হতে, সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হলেও সন্তান জন্ম না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।”
বৈজ্ঞানিক এই উপায়ের ঘোর বিরোধিতা জানিয়ে আবারও প্রতিবাদ করে তসলিমা। বলেন, “সারোগেসিকে তখন মেনে নেবো যখন শুধু দরিদ্র নয়, ধনী মেয়েরাও সারোগেট মা হবে, টাকার বিনিময়ে নয়, সারোগেসিকে ভালোবেসে হবে। ঠিক যেমন বোরখাকে মেনে নেবো, যখন পুরুষেরা ভালোবেসে বোরখা পরবে। মেয়েদের পতিতালয়কে মেনে নেবো, যখন পুরুষেরা নিজেদের পতিত-আলয় গড়ে তুলবে, মুখে মেকআপ করে রাস্তায় ত্রিভঙ্গ দাঁড়িয়ে কুড়ি- পঁচিশ টাকা পেতে নারী-খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করবে। তা না হলে সারোগেসি, বোরখা, পতিতাবৃত্তি রয়ে যাবে নারী এবং দরিদ্রকে এক্সপ্লয়টেশানের প্রতীক হিসেবে।”
ফেসবুকে তসলিমার পোস্টকে ঘিরে চলছে নানান আলোচনা সমালোচনা। কেউ তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ছুঁড়ে দিচ্ছেন তির্যক মন্তব্য।