জমে উঠছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-২০২২। উৎসবের তৃতীয় দিন সোমবার (১৭ জানুয়ারি) পাবলিক লাইব্রেরীকে পুরো একটি সিনেমা পাড়া মনে হলো। চলচ্চিত্র বোদ্ধা, দর্শক, উৎসবের ভলান্টিয়ারসহ সবাই মিলে দারুণ একটি পারিবেশ তৈরি হয়েছে। যেখানে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন বন্ধু, বিনিময় হচ্ছে সংস্কৃতির মেলবন্ধন।
এবারের উৎসবে ৭০টি দেশের ২২৫টি ফিল্ম দেখানো হবে। পাবলিক লাইব্রেরিতে আজ সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়। এখানেই দেখা হলো তিনটি ভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র বোদ্ধার সঙ্গে। সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে একান্ত আলাপনে তারা কথা বললেন ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, সিনেমা, বাংলাদেশ ও দর্শকদের নিয়ে।
সিরাজ হাসিম সাইদি:
সিরাজ সাইদি ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-২০২২-এর একজন জুরি মেম্বার। নিজেকে তিনি ফিল্ম ক্রিটিকস, অভিনয় শিল্পী এবং শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। এসেই বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে গিয়েছেন। তার ভাষায়, “প্রথমবারের মত বাংলাদেশ থেকে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। এবার ১২ দিন এদেশে থাকব। ঢাকার বাইরে কুমিল্লা, সিলেটে যাওয়া হবে। ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসব একটি আন্তর্জাতিক মানের উৎসব।”
এদেশের খাবারও বেশ পছন্দ সিরাজ সাইদির। বিশেষ করে মাছের কথা বললেন তিনি। এই উৎসবের কোন দিকটি সবচেয়ে ভালো লাগছে জানতে চাইলে এই চলচ্চিত্র বোদ্ধা জানালেন, “সারা বিশ্বে নারী নির্মাতাদের নিয়ে খুব বেশি কথা বলা হয় না। কিন্তু এই উৎসবে নারী নির্মাতাদের উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থাও রয়েছে। এটা এই উৎসবের সবচেয়ে ইউনিক দিক বলে আমার মনে হয়।
মোহাম্মদ সাইদ:
মিসরের এই চলচ্চিত্র বোদ্ধা প্রথমবারের মতো ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছেন। বাংলাদেশের মানুষের বন্ধুত্ব, আতিথেয়তা মুগ্ধ করেছে তাকে। নতুন নতুন বন্ধুও হচ্ছে এখানে এসে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বেশ ভালো জানালেন তিনি। সর্বমোট ৮টি বাংলা ছবি দেখা হয়েছে তার। তিনি মনে করেন ফিল্মে নারীদের আরও বেশি এগিয়ে আসা উচিত। যেখানে নারী শুধু পর্দার সামনেই নয়, পেছনেও সমানভাবে কাজ করবে। নারীরা পরিচালনা, সিনেমাটোগ্রাফি কিংবা টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করবে।
দেবনিক কুণ্ডু:
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে কাজ করছেন ভারতের দেবনিক কুণ্ডু। প্রথমবার নিজের চলচ্চিত্র নিয়ে আসলেও, এরপর থেকে ভারত থেকে যত চলচ্চিত্র উৎসবে আসে। সবকিছুর সমন্বয়কের দ্বায়িত্ব তিনিই পালন করে থাকেন। তাই ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবের তার কাছে নিজের উৎসবের মতোই।
এই উৎসবের মতো এতো ছবি পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখানো হয়না বলে দাবি দেবনিকের। তার মতে, “এবার ৭০টি দেশের ২২৫টি ফিল্ম দেখানো হচ্ছে। এক সঙ্গে এতগুলো ছবি, কান বাদে অন্য কোথাও দেখায় বলে আমার জানা নেই।”
করোনার কারণে দর্শক কিছুটা কম বলে মন ভারীও করলেন তিনি। দেবনিক বলছিলেন, “একসঙ্গে এতগুলো ভালো ছবি, কিন্তু তার দর্শক কই। এখানে মিডিয়ার অনেক স্টুডেন্ট আছে, যারা এই ফ্যাস্টিভ্যালে আসতে পারত। নির্মাতাদের সঙ্গে পরিচয়ের একটি মাধ্যম হতে পারত এই উৎসব।”
প্রতিবছর ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। এই উৎসব চলবে আগামী ২৩ জানুয়ারী পর্যন্ত। করোনা ভ্যাকসিন সনদ দেখিয়ে যে কেউ নির্ধারীত ভেন্যুতে চলচ্চিত্র দেখতে পারবেন।