চলচ্চিত্রকর্মীদের দাবির মুখে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড’-এর নাম বদলে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রযোজক-নির্মাতা-অভিনয়শিল্পীরা সেন্সর বোর্ডের নাম নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছে; তাদের আপত্তি আমলে নিয়েছে সরকার। ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন-২০২১’-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিষয়বস্তু বিবেচনায় সিনেমাকে চার ভাগে ভাগ করে যে আইনের সংশোধন খসড়া তৈরি করা হয়েছে, তাতে সব বয়সী মানুষের দেখার উপযোগী সিনেমাকে একটি শ্রেণিতে রাখা হবে। সন্তানদের নিয়ে দেখলে পিতা-মাতা যেন বিব্রত না হন—এমন সব সিনেমা থাকবে এই শ্রেণিতে। হালকা সংঘর্ষ বা রসিকতা থাকলেও নগ্নতা, যৌনতা, হিংস্রতা কিংবা অশালীন ভাষার ব্যবহার থাকবে না এ শ্রেণির সিনেমায়।
কাহিনির প্রয়োজনে ধূমপান বা মাদক গ্রহণের দৃশ্য দেখাতে হলে সতর্কীকরণ বক্তব্য বা চিহ্ন দেখাতে হবে। আরেক শ্রেণির সিনেমা হবে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য। শিশুতোষ এসব সিনেমায় হালকা ভীতিকর দৃশ্য থাকার সুযোগ রাখা হয়েছে। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য প্রস্তাবিত এ ধরনের সিনেমায় কম মাত্রার ভীতিকর দৃশ্য এবং রোমান্টিকতার উপস্থিতি থাকতে পারে। শেষ ধাপে থাকা সিনেমাগুলো মূলত বেশি বয়সী অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য হবে। ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সীদের জন্য এ ধরনের চলচ্চিত্রে পরিমিত মাত্রায় সন্ত্রাস, ভয়ানক দৃশ্য এবং রোমান্টিক দৃশ্যের উপস্থিতি থাকবে।
এই আইনটি কার্যকর হলে এটি চলচ্চিত্রের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, “পৃথিবীর কোথাও সেন্সর বোর্ড বলে কিছু নেই; সার্টিফিকেশন বোর্ড আছে। নাম পরিবর্তনের এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। আশা করি, চলচ্চিত্রের জন্য ইতিবাচক ফল আনবে।”
নীতিমালার সঙ্গে যুক্ত থাকা সেন্সর বোর্ডের সাবেক এক সচিব বলেন, “কোন গ্রেডের চলচ্চিত্রটি কোন বয়সী মানুষের জন্য উপযোগী, তা নির্ধারণ করবে গ্রেডিং সিস্টেম। ভয়াবহ দৃশ্য রয়েছে, এমন সিনেমাকে আমরা কোনোভাবেই শিশু উপযোগী সিনেমা বলব না। তা ছাড়া একটি সিনেমা আদৌ সিনেমা কি না, সে বিষয়টিও ঠিক করা হবে।”
বর্তমান নীতিমালায় সিনেমার পোস্টার, ডায়াগ্রাম, স্কেচ, হ্যান্ডবিল প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের জন্য বোর্ডের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।