• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গাফ্‌ফার চৌধুরীর কবিতায় পরীমনি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২০, ২০২২, ১১:৫৭ এএম
গাফ্‌ফার চৌধুরীর কবিতায় পরীমনি

ভাষার জন্য বাঙালির রক্তদানের স্মৃতি জড়ানো একুশের গানের রচয়িতা, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী (৮৮) বৃহস্পতিবার (১৯ মে) লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান। বাঙালির ভাষার ইতিহাসের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে থাকবে আজীবন। এই গুণী ব্যক্তির মৃত্যুতে গভীর শোকে স্তব্ধ দেশের আপামর জনসাধারণ। এবার তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনি।

২০২১ সালে পরীমনিকে গ্রেপ্তারের পর তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার ছিলেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। তাকে নিয়ে কবিতাও লিখেছিলেন তিনি।

পরীমনিকে নিয়ে লেখা কবিতাটির শিরোনাম ছিল  ‘পরীমনি, তুমি কেঁদো না’। সেই কবিতাটিই ফেসবুকে পোস্ট করে চিত্রনায়িকা লিখেছেন, “আমি পেয়েছিলাম ঐ দুর্লভরে। মিলিবে কী আর...!”

মাদক মামলায় পরীমনিকে গ্রেপ্তারের পর তার মুক্তির দাবিতে সরব ছিলেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী । লন্ডন থেকে মোবাইলে ফোনে বিভিন্ন সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। লিখেছেন কলামও।

অক্টোবরের দিকে একটি জাতীয় দৈনিকে পরীমনিকে নিয়ে কবিতাটি লিখেছিলেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচিত হয়েছিল।

 

কবিতাটি —

পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না

তুমি আমার জন্য কেঁদেছ, শরতের আকাশের

চুপিসারি কান্না,

যা শিশির হয়ে টুপটাপ ঝরে।

আমি রোগশয্যায় শুয়ে শুনেছি সেই রোদন

তুমি কেন আমার জন্য কাঁদলে

আমি টেলিফোনে শুনেছি তোমার সেই কান্না

নায়াগ্রায় দাঁড়িয়ে যে জলপ্রপাতের

শব্দ শুনেছিলাম

তোমার কান্না সেই শব্দের সংগীতকে স্তব্ধ করেছে।

এখানে বড় ঠান্ডা, সেই ঠান্ডায় তোমার কান্না

উষ্ণ জলপ্রপাতের কাজ করেছে

আমার হৃদয়ে।

পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেন কাঁদলে

কেন হৃদয় দিয়ে হৃদয় বাঁধলে

ওরা তোমাকে বলে চরিত্রহীনা, আকাশনীলা পাখি

আমি জানি, তুমি শরতের শিশির ধোয়া

শিউলির মতো সুচরিতা।

ছবি দেখেছি, জেল থেকে বেরিয়ে আসছো—

দুই হাত ঊর্ধ্বমুখী জোয়ান অব আর্কের মতো

ওরা তোমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল

তুমি স্ফিংসের মতো জেগে উঠেছ

দু ডানায় আগুনের ফুল।

পরীমনি, ওরা তোমাকে দ্রৌপদী বানাতে চেয়েছিল

তুমি হয়ে গেলে দয়মন্তী।

তোমার কান্না আমার মগ্নচৈতন্যকে স্পর্শ করেছে

তোমার চোখের কান্নায় দেখেছি আমার মায়ের—

চোখের জল।

তুমি তেরো নদী সাত সমুদ্র পেরিয়ে

আমাকে সিক্ত করলে মায়ের সেই চোখের জলে।

তোমার কান্না আমার বেদনাকে

ছুঁয়ে গেছে।

তুমি স্কাইলার্কের গান শুনেছ

বিলাতের বসন্তের বাগানে?

সুন্দরী পাখিটির কণ্ঠে কান্নাই গান

তুমি ওই স্কাইলার্কের মতো

আমাকে তোমার কান্না শোনালে

কান্না নয় গান, চোখের জল নয়

হৃদয়ের প্লাবন।

ভারত মহাসাগর পেরিয়েছে

তোমার কান্না, বঙ্গোপসাগরেও

বনানীর জলপাই রঙের বাড়িটা ছেড়ে

চাঁদপুরের পুরোনো বন্দরটা পেরিয়ে

মেঘনার জলকে টেমসের সঙ্গে মিশিয়ে

কার্তিকের চাঁদ হয়ে ঝুলে আছে

আমার রোগশয্যার বারান্দায়।

পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না

মায়ের মতো ভালোবাসার

দুবাহু বাড়ায়ে দিয়ো না

ভালোবাসা বড় দুর্লভ সৌরভ

সুগন্ধির দোকানে কখনো পাবে না।

Link copied!