• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঢাবিতে ‘কালো দিবস’ পালিত


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২২, ০৫:১৪ পিএম
ঢাবিতে ‘কালো দিবস’ পালিত

নানা আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘কালো দিবস’ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই কালো ব্যাজ ধারণ করেন। সেই সঙ্গে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস বন্ধ ছিল।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) কালো দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সঞ্চালনায় অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভাপতির বক্তব্যে ২০০৭ সালের ২০-২৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের চিত্র তুলে ধরে বলেন, “একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের গণবিচ্ছিন্ন কিছু মানুষ অগণতান্ত্রিক পন্থায় সেদিন ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে ক্ষমতালিপ্সু সেই অপশক্তি পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।”

তিনি আরও বলেন, “জাতির সকল ক্রান্তিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। যেকোনো অপশক্তি ও অপতৎপরতা প্রতিহত করতে ভবিষ্যতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন।

এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতিতে জাতীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার ওপর উপাচার্য গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় উপ-উপাচার্য চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, কারা নির্যাতিত শিক্ষক অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিকসহ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী সমিতি ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য দেন।

এদিকে মঙ্গলবার রাত ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এম আকাশের সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় অন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দিবসটির ওপর আলোচনায় অংশ নেবেন।

২০০৭ সালের ২০ আগস্ট বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রদের মধ্যে ফুটবল খেলা চলছিল। ওই খেলাকে কেন্দ্র করে উপস্থিত ছাত্র ও সেনা সদস্যদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

খেলার মাঠেই শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় উপস্থিত সেনাসদস্যরা। ২১ আগস্ট নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থী। স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। তখন তাদের ওপর আক্রমণ চালায় পুলিশ। ২২ আগস্ট এই আন্দোলন গোটা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার ২২ আগস্ট সান্ধ্য আইন জারি করে এবং ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাবির আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২৩ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক এবং আটজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালানো হয়।

ধীরে ধীরে গ্রেপ্তারদের মুক্তির আন্দোলনও বেগবান হতে থাকে। পরে আরও দুটি ব্যানারে ছাত্রবন্ধু ও নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলন ছাত্র-শিক্ষক মুক্তির আন্দোলনে গতির সঞ্চার করেছিল। ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তি আন্দোলনের কাছে হার মানে সেনা সমর্থিত সরকার। বাধ্য হয়ে গ্রেপ্তার করা ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তি দেওয়া হয়। পরের বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ২৩ আগস্টকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর

Link copied!