পৃথিবী আজ বিপদাপন্ন। আমরা জানি না আমাদের আগামীটা কেমন হবে। শুধু জানি আমাদের আগামী দিনের আলো এখন নিভু নিভু। শিশুরা আজ স্বপ্ন বুনতে বাধা পাচ্ছে। দেশের কোমলমতি শিশুরা এক নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত এখন। সেই শব্দটি হল ‘লকডাউন‘। শব্দটি বর্তমান সময়ে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। শিশুদের কাছে লকডাউন অন্যরকম এক অভিজ্ঞতার নাম।
ঢাকার স্কুলগামী শিশুদের সাথে অনলাইনে গল্পের আসরে জানা গেলো তাদের মনোজাগতিক নানান কথা। খেলাঘরের ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফসা হাবীব জানায়, বান্ধবীর জন্মদিন তাই সে অনেকগুলো উপহার বানিয়েছে। কিন্তু এই লকডাউনের কারণে স্কুলে যেতে পারছে না। কথা বলতে গিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে ছোট্ট আফসা।
টেলিভিশনে প্রতিদিন মৃত্যু সংখ্যা গণনায় আমাদের শিশুরা গণিতের গণনা ভুলেই যাচ্ছে। এ লকডাউনে শিশুদের মানসিক বিকাশ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের ছোট ছোট প্রশ্নগুলোর কোনো জবাব নেই আমাদের কাছে। আমরা কেবল দেখে যাচ্ছি একটা প্রজন্ম কীভাবে থমকে যাচ্ছে। কেননা এই মহামারি কবে শেষ হবে আমরা কেউ জানি না। আমরা জানি না, কবে বাংলাদেশ আবার বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবে।
আমরা বেঁচে আছি বাংলাদেশের সেই মাটিতে, যে মাটি ভিজেছিল একাত্তরে শহীদের রক্তে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ তেমন করেই ভিজে চলেছে স্বজন হারা মানুষের চোখের পানিতে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে শহীদ পরিবারের স্বজনদের আজ রক্তচোখ। দেশের মানুষের চোখে নেই শান্তির ঘুম। শিশুর স্বপ্নজুড়ে এখন দারুণ ভয়াবহতা।
আমরা এই সময় ঠিক কতটা অসহায়, তা জানিয়েছে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী বোর্ডের বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী রাফসান মাহবুব। রাফসানের ভাষ্যমতে কোভিড-১৯ মানে মাকে ভিডিও কলে দেখা, আর বাবাকে পিপিই পরিহিত অবস্থায়। তার কথা শুনে মনে পড়ে গেলো ১৯৭১ সালের স্মৃতি নিয়ে লেখা জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলো’। যেখানে যোদ্ধা বৃষ্টিতে ভিজে যুদ্ধ করেছেন বিশাল রেইনকোট গায়ে। এই পিপিই, রাফসান, ভেজা চোখ সবকিছু কি আমাদের একাত্তরের সেই বার্তা দিতে এসেছে? আজকের শিশুরা যুদ্ধ দেখেনি কে বলেছে? আজকের শিশুরা মহামারির মতো ভয়াবহ যুদ্ধ দেখছে।
বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা ছিল ২০২১ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। কোভিড-১৯ এই বাংলাদেশকে খুব সহজেই ডিজিটাল করে দিয়েছে। শিশুরা এখন ক্লাস করে অনলাইনে। টেলিভিশনে এখন মহামারির খবর নয়, বরং শ্রেণিকাজের হিসাব রাখছে তারা। তবে আসলেই কি আমাদের দেশের শিশুদের নিয়ে এমন স্বপ্নই দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু? বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিতে দেখা শিশুরা আজ আকাশ দেখতে পায়। তবে ঘরের জানালা থেকে ক্ষুদ্র আকাশের বিশালতা তারা অনুভব করতে পারে না।
আজকের শিশুরা আগামীটা কীভাবে গড়বে? প্রশ্ন নয়, আক্ষেপ হয়! শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষুদ্র এ স্বপ্ন একজন মানুষের বেঁচে থাকার অক্সিজেনের মতই। প্রতিটি শিশু বাংলাদেশ জন্মের গল্পগুলো স্বপ্নের চোখে দেখবে, যখন কোভিড-১৯ এর ভাঙা চাঁদটা খসে পড়বে।
লেখক : শিক্ষার্থী, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ।