নতুন শিক্ষাক্রমের দায়িত্ব কে গ্রহণ করবেন, তার প্রকৃত ধারণা শিক্ষাক্রমে দেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ ভাবনা নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু সেমিনার কক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, “১৯৪৭ সালের আগে রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল না। তখন শিক্ষার দায়িত্ব সামষ্টিক ও সামাজিক ছিল। কিন্তু বর্তমানে সামষ্টিক ও সামাজিকভাবে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছে রাষ্ট্র। অতএব, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে কি না সে স্থানটি আগে স্পষ্ট করা জরুরি ছিল। তারপরে অন্য আলোচনা। কিন্তু আমি মনে করি এখানে (নতুন শিক্ষাক্রমে) শিক্ষার দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট করা হয়নি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরও বলেন, “নতুন শিক্ষাক্রমের প্রক্রিয়ায় ৮০০ জনের কথা বলা হয়েছে। তাদের যে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনও শিক্ষা মনোবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি নেই। অর্থ্যাৎ এই শিক্ষাক্রম প্রস্তুতে অংশিজনের কোনো অংশগ্রহণই নেই। ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই কারিকুলাম নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে এবং প্রস্তুত ও প্রণয়ন করা হয়েছে ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে। যখন করোনা মহামারিতে পুরো পৃথিবী থমকে ছিল। এসব বিষয় শিক্ষাক্রমের আলোচনার শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন, থমকে যাওয়া পৃথিবীতে তারা এ ডকুমেন্ট কীভাবে তৈরি করলেন? কোন অংশিজনের অংশগ্রহণেই বা এটা তৈরি করা হলো?”
সেমিনারে অন্য বক্তরা বলেন, “নতুন শিক্ষাক্রমে যে কারিকুলামের কথা বলা হয়েছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। যদি এই কারিকুলাম বাস্তাবায়নযোগ্য হয়। তবে এই কারিকুলাম সাধারণ ধারার বৈশিষ্ট্যকে ক্ষুন্ন করেছে। কারণ যে মানুষটা কাজ করবে না, শুধু চিন্তা করবে। তার ভাবানার স্থান এই কারিকুলামে রাখা হয়নি। যদি দুই বছর বা পাঁচ বছর পরে, অন্যগুলোর মতো এই শিক্ষাক্রমটা বাতিল হয়, তখন এটার দায় কে নেবে? অর্থ্যাৎ যারা নতুন এই শিক্ষাক্রমে পড়তে যাচ্ছে। তাদের জন্য এই শিক্ষাক্রম বোঝা হতে যাচ্ছে।”
এ সময় সংগঠনের সদস্যরা শিক্ষাখাতে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক গঠনবাদী তত্ত্বের ভিত্তিতে শিক্ষার উপযুক্ত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিক আয়োজন যেমন- ছাত্র শিক্ষক অনুপাত, পর্যাপ্ত শিক্ষা বাজেট ইত্যাদি নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষার মূলকেন্দ্রে পরিণত করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা (বিজ্ঞান/গবেষণা) বিভাগ চালু করতে হবে। প্রাক শৈশব ও প্রাক প্রাথমিকের জন্য স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞতা, মূল্যায়ন ও মতামত গ্রহণের অনুকূল, আধিপত্যমুক্ত, গণতান্ত্রিক শিক্ষা প্রশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলা, ইংরেজি, কারিগরি, মাদ্রাসাসহ ভিন্ন ভিন্ন ধারাকে একই শিক্ষা পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে। শিক্ষাক্রম নিয়ে সর্বস্তরের জনগণের অবাধ মতামত প্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করে আটক চার শিক্ষক ও অভিভাবককে মুক্তি দিতে হবে।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা, স্বপ্ননগর বিদ্যানিকেতনের শিক্ষাকর্মী ধ্রুবজ্যোতি হোড় উপস্থিত ছিলেন।