উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রচলন অনেক আগে থেকেই। সেক্ষেত্রে অনেকেই পছন্দের তালিকায় থাকে আমেরিকা। উচ্চশিক্ষায় ভর্তিচ্ছু এই দেশে অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা আগে থেকেই কাঙ্ক্ষিত প্রফেসরকে মেইল করেন। মেইলের জবাব পেয়েই উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন তারা। কিন্তু তাদের অনেকেই জানেন না, মেইলের কোন উত্তরের কি মানে এবং করণীয় কী?
প্রফেসরের দেওয়া ৪ ধরনের মেইলের জবাবের কোনটার কোন মানে তা ব্যাখ্যা করেছেন অ্যালাবামার ইউএবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রাগিব হাসান। তিনি ‘আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা-প্রফেসরের ইমেইলের মর্মোদ্ধার সহায়িকা’ শিরোনামে এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন।
রাগিব হাসান তার ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, মাস্টার্স বা পিএইচডিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক ধরনের পোস্ট প্রায়ই দেখি। তা হচ্ছে ভর্তিচ্ছু কেউ কোনো প্রফেসরকে ই-মেইল করেছেন। সেই প্রফেসর এক সময়ে একটা জবাব দিয়েছেন। এর মানে কী, প্রফেসর কি আগ্রহ দেখিয়ে ফান্ডিং দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন, নাকি এইটা জেনেরিক রিপ্লাই? প্রায়ই এসব পোস্টে অনেকে বিজ্ঞের মতো অভিমত দেন, পজিটিভ রিপ্লাই, ফান্ডিং নিশ্চিত ইত্যাদি ইত্যাদি। বিভ্রান্তি বাড়া, পকেটের পয়সা শুধু শুধু অ্যাপ্লিকেশন ফিতে খরচ হওয়া, আর টেনশনে মাথার চুল পেকে যাবার আগে এই লেখাটা একটু পড়ে দেখুন।
প্রফেসররা ভর্তির মৌসুমে প্রতিদিন অনেক অনেক ই-মেইল পান ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। আর দৈনন্দিন কাজের জন্য শ’খানেকের মতো ই-মেইল তো আছেই। এই অবস্থায় ই-মেইল ম্যানেজ করার জন্য প্রফেসররা নানা কায়দা করেন। প্রফেসরের ই-মেইল পেলে তাই একটু বুঝে নিতে হবে আসলে সেটা কী রকমের ইমেইলের জবাব। সেগুলো নিচে দেওয়া হলো-
১) আমার সঙ্গে কাজ করতে চাও ভালো কথা। তবে তার আগে ভর্তিটা হয়ে নাও। ভর্তি হতে হলে অ্যাপ্লিকেশন করো।
এই রকমের জবাব হলো জেনেরিক রিপ্লাই বা ফর্ম লেটার। এটা ভদ্রতা বশত প্রফেসর জবাব দিয়েছেন। টাইপও সম্ভবত করেননি। একটা টেক্সট ফাইলে এই জবাবটা তৈরি করা আছে, সেখান থেকেই কপি পেস্ট করে দিয়েছেন।
এই প্রফেসরের আপনার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। হতে পারে সেটা আপনার প্রোফাইলের জন্য, অথবা তার গ্রুপে আর নেওয়ার দরকার নেই। এই জবাবটা মোটেও ‘পজিটিভ রিপ্লাই’ না। এই জবাব পেয়ে ইয়াহু বলে অ্যাপ্লাই করতে চলে যাবেন না।
২) আমার সঙ্গে কাজ করতে চাও? আচ্ছা ভর্তির স্টেটমেন্ট অফ পারপাজে আমার নাম উল্লেখ করতে পারো।
এই প্রফেসর আগে ভাগে ফান্ডিং দিয়ে রিস্কে যেতে চান না। আর এ নেওয়াটা তার জন্য অত জীবন-মরণ সমস্যা না এই মুহূর্তে। তবে হালকার ওপরে ঝাপসা একটা ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন, যাতে ভর্তি কমিটি এই শিক্ষার্থীকে নিলে তার দিকে পাঠিয়ে দেয়। এটা হালকা উষ্ণ (কবোষ্ণ) জবাব। এখানে অ্যাপ্লাই করতে পারেন। আরও লেগে থাকলে ভাগ্যে কিছু জুটতে পারে।
৩) আমার সঙ্গে কাজ করতে চাও? আচ্ছা তোমার একটা পরীক্ষা নেই, অমুক বিষয়ে কিছু লিখে পাঠাও ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই প্রফেসরের লোক দরকার। তবে সাবধানি মানুষ। যাচাই করতে চান কেমন হবেন আপনি। তাই কাজ দিয়ে চেক করে নিতে চাচ্ছেন। এটার লক্ষণ ভালো।
৪) আমার সঙ্গে কাজ করতে চাও? তোমার ফোন বা স্কাইপ নম্বর কত? কখন কথা বলতে পারবা? তার জরুরি ভিত্তিতে লোক লাগবে। ইন্টারভিউতে ঝামেলা না করলে ভাগ্যে ফান্ডিং জোটার সম্ভাবনা বেশ ভালো।
যা হোক, মোটামুটিভাবে সব প্রফেসর এই চার রকমের যেকোনো একভাবে জবাব দেবেন। ভদ্রতার জন্যই দেওয়া জবাবকে ফান্ডিংয়ের গ্যারান্টি মনে না করে, আসলে কী রকমের আভাস পেলেন, ওপরের হিন্ট থেকে বুঝে নিতে শিখুন।