ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রতিষ্ঠার ১০২ বছর পেরিয়ে ১০৩ বছরে পদার্পণ করেছে। ১০২ বছরের এ পথচলায় নানা সংগ্রাম-ঐতিহ্যের ও গৌরবময় কণ্টকাকীর্ণ পথচলায় অর্জনের তালিকাও বেশ লম্বা। রাষ্ট্র সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে রাষ্ট্র সৃষ্টিতেও ভূমিকা রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। পৃথিবীর হয়তো অনেক নামী বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে, তবে রাষ্ট্র সৃষ্টি এবং রক্ষায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।
১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর ৪৮ থেকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র স্বাধীনতা সংগ্রাম, ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি পরতে পরতে এই নাম জড়িয়ে আছে দেশের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের।
১৮৪৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পর গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে মুসলিম শিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলার একধরনের নবজাগরণ তৈরি হয়। যার প্রভাব পড়ে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গতেও। বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলে অল্প কিছুদিন পরেই ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসে। তারই অংশ হিসেবে ওই বছরের ২৭ মে নাথান কমিশন গঠিত হয়। ১৯১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কমিশন ইতিবাচক রিপোর্ট দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। তবে এর পরই বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে সেই কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে যায়। ১৯১৭ সালে স্যাডলার কমিশন পুনরায় ইতিবাচক রিপোর্ট দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা চূড়ান্ত হয়। ১৯২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় আইনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই বছর ১৮ মার্চ এটি আইনে পরিণত হয়। অবশেষে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইনসভায় দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট ১৯২০ পাস হয়। ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এই বিলে সম্মতি প্রদান করেন। এর ফলে ১৯২১ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠাকালীন তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল ৬০ জন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৮৪টি বিভাগ, ৬০টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র এবং ছাত্রছাত্রীদের ১৯টি আবাসিক হল, ৪টি হোস্টেল ও ১৩৮টি উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার ১৫০ জন। পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৮ শিক্ষক।
বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র গঠন কিংবা স্বার্থ আদায়ে সংগ্রামের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট গর্ব করার মত হলেও বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাল মিলিয়ে চলতে অনেকাংশেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। গবেষণা শিক্ষকদের অনীহা, গবেষণাতে চৌর্যবৃত্তি, রাজনীতির নামে শিক্ষকদের মাঝে নোংরা সংস্কৃতি, নোংরা লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতি সহ নানা অভিযোগ হরহামেশাই গণমাধ্যমে উঠে আসে।
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরে রূপকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। আর সেটি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে ভূমিকা রাখবে সেটিকে সামনে রেখে এবছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়।’
হয়তো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), যেটুক লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থতা পূরণ হয়েছে সেই লক্ষ্য পূরণেও বিশ্বের অন্যতম প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত পাবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, এমনটিই প্রত্যাশা সকলের।