• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঢাবিতে ‘অন্যরকম’ গণত্রাণ, হাজারো মানুষের ঢল


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৪, ০৯:১২ এএম
ঢাবিতে ‘অন্যরকম’ গণত্রাণ, হাজারো মানুষের ঢল

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে নিজের ছোট্ট ব্যাংকটি নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে ১০ বছর বয়সী ইহান। শুধু ইহান নয়, করপোরেট পেশাজীবী থেকে শুরু করে দিনমজুর-রিকশাচালকসহ নানা বয়স, শ্রেণি, পেশার মানুষ নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। 

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘গণত্রাণ’ কর্মসূচিতে ত্রাণ পৌঁছে দিতে হাজারো মানুষের ঢল নামে। ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে শুরু করে, ট্রাক, সিএনজি, রিকশা বা হাতে করে অসংখ্য মানুষ ত্রাণ নিয়ে আসেন। একের পর এক প্রাইভেট কার, ট্রাক, ঠেলাগাড়ি থেকে নামানো হচ্ছে শুকনো খাবার, খেজুর, ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, খাবার পানিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী।

এত শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষের মিলনমেলা বহু বছর দেখেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাত ১০টা পর্যন্ত নগদ ১ কোটি ২৬ লাখ ২২ হাজার ১৭২ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে আজকের মতো ত্রাণ সংগ্রহ বন্ধ করা হয়।

এদিন বিকাল থেকে সরেজমিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ঘুরে দেখা যায়, সন্ধ্যা নামার পরে ত্রাণ দেওয়া মানুষের পরিমাণ বাড়তে থাকে। সকাল ৮টায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়, রাত ১০টা পর্যন্ত চলে।

টিএসসি প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিভিন্ন পরিবহনে করে বন্যার্তদের জন্য খাবার, জামা-কাপড়, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসছেন। অসংখ্য মানুষ তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে এসেছেন। তাছাড়া বিকেলে বিজিবির একটি কাভার্ড ভ্যান ভর্তি করে ত্রাণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সংগ্রহে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীকে বিরামহীনভাবে কাজ করতে দেখা যায়। ত্রাণের বহর খালি করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কদের এসব তদারকি করতে দেখা যায়।

এদিকে দিনভর বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী আসায় টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া ও গেমস রুম বিকেলেই পূর্ণ হয়ে যায়। পরবর্তীতে টিএসসির বারান্দায় ত্রাণ সামগ্রী স্তূপ করে রাখা শুরু হয়। টিএসসির বারান্দায়ও ত্রাণ সামগ্রী বিশাল স্তূপ লক্ষ্য করা গেছে। স্বেচ্ছাসেবকরা মানব লাইন তৈরি করে টিএসসি গেট থেকে ভেতরে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন।

শুধু খাদ্যসামগ্রী নয়, সংগ্রহ করা হচ্ছে নগদ টাকাও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেওয়া তথ্য মতে, রাত ১০টা পর্যন্ত নগদ অর্থ উঠেছে  ১ কোটি ২৬ লাখ ২২ হাজার ১৭২ টাকা।

এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, সাধারণ মানুষ বন্যার্তদের সাহায্যে এভাবে এগিয়ে আসবে তা কল্পনাতীত ছিল। আমরা ভাবতেও পারিনি এত পরিমাণ ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ত্রাণ আসবে। মানুষ যতটা পারছে সাহায্য করছে। দ্রুতই ত্রাণ সামগ্রী বন্যার্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

ত্রাণ পৌঁছে দিতে আসা একজন নারী বলেন, “আমি আজীমপুর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই গণত্রাণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে এসেছি। নিজের যতটুকু সামর্থ্য সে অনুযায়ী আমি সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। দেশের সকল স্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছে। অসহায় মানুষের পাশে এভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে দেখে অনেক ভালো লাগছে। এই শিক্ষার্থীরাই সামনের দিনে সুন্দর দেশ গড়বে বলে আমি মনে করি।”

দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা শুরু হওয়ার পর বুধবার (২০ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণত্রাণ সংগ্রহের এই উদ্যোগের ঘোষণা দেন৷ আন্দোলনের সব সমন্বয়ক ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিজ নিজ জেলা-উপজেলায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও জনসাধারণের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠনের আহ্বান জানান বাকের। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল সবার সঙ্গে সমন্বয় করে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য দুর্গতদের জন্য রেসকিউ অপারেশন ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

 

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর

Link copied!