“আমি মুজতবা আলী হলের ১১৭নং রুমে ছাত্রলীগের গ্রুপে উঠি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে সিনিয়র ভাইয়েরা ওই হলের ১১১নং কক্ষে আমাদের ১২-১৩ জুনিয়রকে ডাকেন। আমরা সেখানে গেলে প্রথমে আমাদের পরিচয় দিতে বলেন। পরিচয় দিলে তারা আমাদের নামের শেষে যৌনবিষয়ক শব্দ যোগ করে উচ্চারণ করতে বলেন। এ কথায় রাজি না হলে শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দেন এবং যতক্ষণ রুমে ছিলাম পুরোটা সময় শুধু ধমক দিয়ে যাচ্ছিলেন।”
এভাবেই সেদিনের র্যাগিংয়ের দৃশ্য বর্ণনা করছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের র্যাগিংয়ের শিকার ওই শিক্ষার্থী।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, “আমার এ ছোট্ট জীবনে এটা ছিল ভয়াবহ রাত। আমি আর জীবনে হলে উঠব না। সিনিয়র ভাইদের জন্য এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেই ভয় করে।”
তিনি বলেন, “আমাদের দুই বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে সিনিয়র ভাইয়েরা বলেন, ‘তোরা একজন আরেকজনকে রেইপ কর।’ এ রেইপের দৃশ্য করার পর আরেক সিনিয়র ভাই বলেন, ‘এ তুই তো ঠিকমতো রেইপ করতে পারলি না রে।’ এসব করার পরও তারা থেমে থাকেনি।”
ওই রাতের দৃশ্য মনে করলেই আমার গা শিউরে ওঠে জানিয়ে ওই শিক্ষার্থী বলেন, “র্যাগিংয়ের একপর্যায়ে সিনিয়র ভাইয়েরা আমাদের যৌনকর্মী সেজে দেহ প্রদর্শন ও খরিদদার ধরার দৃশ্য করতে বাধ্য করেন। আমাকে দিয়ে অনেকবার ট্রেনে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের টাকা তোলারও দৃশ্য অভিনয় করতেও জোর করেন। আমি বাধ্য হয়ে এসব করি। এসব করে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। তখন আমার মাথা ঘুরছিল। আমার বন্ধু একজন চিৎকার করে কান্নাও শুরু করেছিল।”
সিনিয়রদের কাছে এভাবেই মানসিকভাবে হেনস্থার শিকার হয়ে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বরাবর অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত ৫ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফজলুর রহমান এ তথ্য জানান।
সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন, ব্যবসায় প্রশাসনের বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের মো. আপন মিয়া, মো. আল আমিন, মো. পাপন মিয়া, মো. রিয়াজ হোসেন ও মো. আশিক হোসেন।
এদিকে র্যাগিংয়ের বিষয়ে ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের ভেতরে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, “আমরা কাজ শুরু করেছি। তদন্তের কাজ চলমান আছে।”