সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আলোচিত প্রলয় গ্যাংয়ের দুই সদস্য কারাবন্দী হওয়ার পরপর গা ঢাকা দিয়েছেন এ গ্যাংয়ের বাকি সদস্যরা। সহপাঠীরাও তাদের সম্পর্কে কিছু বলতে পারছেন না। প্রশ্ন উঠেছে, সহপাঠীরা জেনেও কি তাদের খোঁজ দিচ্ছেন না।
শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েরকে ডেকে বেদম মারধর করেন ‘প্রলয়’ গ্যাংয়ের ১০-১৫ সদস্যের একটি দল। এতে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় জোবায়েরের। এ ঘটনায় রোববার (২৬ মার্চ) শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা সাদিয়া আফরোজ খান। লিখিত এ অভিযোগে জোবায়েরের মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনের নাম উল্লেখ করেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর ওই রাতে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে শাহবাগ থানা-পুলিশ। পরে সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুরে ঢাকার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের (সিএমএম) ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহাম্মদ তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে গণমাধ্যমে সংবাদ ও মামলা করা হলে প্রলয় গ্যাংয়ের বাকি সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে হল ও বিভাগের সহপাঠী কেউই তাদের খোঁজ দিতে পারছে না।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র তবারক মিয়া এক নম্বর আসামি। এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সিফাত সাহিল, ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে সাকিব, মো. সোভন ও সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ ওরফে সাইদ, সূর্য সেন হলের ফারহান লাবিব, মুহসীন হলের অর্ণব খান ও আবু রায়হান, কবি জসীমউদ্দীন হলের নাঈমুর রহমান ওরফে দুর্জয়, সাদ, রহমান জিয়া, মোশারফ হোসেন, জহুরুল হক হলের হেদায়েত নূর, মাহিন মনোয়ার, সাদমান তাওহিদ ওরফে বর্ষণ ও আবদুল্লাহ আল আরিফ, জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা ও জয় বিশ্বাস এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ফেরদৌস আলম ওরফে ইমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযুক্তদের অনেক সহপাঠীই বলছেন ঘটনার পর তাদের দেখা যায়নি। হয়তো তারা মামলার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে তবারক, ফয়সাল আহমেদ সাকিব, সাদ, নাসিফ মারামারিতে নেতৃত্ব দেন। বাকিরা মাদকাসক্ত এবং তাদের কথাতে সায় দিয়ে অপরাধে জড়ান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযুক্তদের এক সহপাঠী বলেন, “সামনে ঈদ। তাই বাড়িতে চলে যেতে পারে। তারা হয়তো ভাবছে ঈদের পর সব স্বাভাবিক হবে।”
এদিকে গ্যাংয়ের বাকিদের চিহ্নিত করতে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) একটি আন্তহল তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী রোববার তদন্ত কমিটির সভা রয়েছে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঢাবি উপাচার্য বরাবর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
চোখে দেখছেন না ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী
এদিকে ‘প্রলয়’ গ্যাংয়ের সদস্যদের হামলায় আহত অপরাধবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুন বর্তমানে বাঁ চোখে দেখতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে জোবায়েরের সহপাঠী খালেদ মাহমুদ মিরাজ বলেন, “ঘটনার দিন জোবায়ের বাঁ চোখে বেশি আঘাত পেয়েছিল। বর্তমানে ওই চোখে সে দেখতে পারছে না।”
আরেক সহপাঠী নিঝুম বলেন, “জোবায়েরের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সে বাসায় আছে। তার বাঁ চোখ ফুলে বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে লাল রক্ত জমাট বেঁধেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। তার পরিবার ও আমরা তার চোখ নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি। তার চাচা এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি তাকে দেখভাল করছেন।”