উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা ৩০ জুন থেকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে পরীক্ষার রুটিনও প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটি। তবে দেশজুড়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পেছানোর কথা বলছে।
২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দুই মাস পেছাতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। স্মারকলিপিতে পরীক্ষা পেছানোর জন্য বেশ কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি জমা দেন।
পরীক্ষা পেছানোর কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১৫ লাখের বেশি মানুষ। এ ছাড়া উজানি ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল। ভারি বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম। দ্বিতীয় দফা বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেট। সুরমা-কুশিয়ারাসহ এ অঞ্চলের সবকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে সামাজিকমাধ্যমে কয়েক দিন ধরেই সরব শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, আকস্মিক পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে বৃহত্তর সিলেট, রংপুর-কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গ প্লাবিত হয়। ডুবে যায় পথঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি। বন্যাকবলিত অঞ্চলের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিচ তলা এখনো পানির নিচে। এ পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীদের স্বাভাবিক প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটায় পরীক্ষা পেছানোর দাবি উঠেছে।
এর আগেও এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবি উঠেছিল। তখন আগের দুই ব্যাচের তুলনায় সময় কম পাওয়ার অজুহাত তোলা হয়। সে দাবিতে এইচএসসি পরীক্ষা ৩০ জুনের পরিবর্তে ৩০ আগস্ট শুরু করতে আওয়াজ তোলেন অনেকে।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, দ্বিতীয় দফায় সিলেটে ৪৮৯টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে ২২৬টি বিদ্যালয়ে বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যাকবলিত হয়েছে ২৫৯টি বিদ্যালয়। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ১৪৮টি বিদ্যালয়। তিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বন্যার পানি ওঠায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। এ ছাড়া বেশ কয়দিনের ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে পানিতে তলিয়েছে টেকনাফ। এসবের পাশাপাশি, ময়মনসিংহ বিভাগের বন্যা পরিস্থিতিরও চরম অবনতি হচ্ছে। রংপুর-কুড়িগ্রাম অঞ্চলও ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে।
তারা আরও লিখেছেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা বই-খাতা বন্যায় ভিজেছে, নষ্ট হয়েছে, তারা কীভাবে এই দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষায় অংশ নেবে? আবার বন্যাকবলিত এলাকায় দিন ও রাতের সিংহভাগ সময়ে বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুতের অভাবে সন্ধ্যার পর পড়তে বসাটাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন বিপৎসংকুল অবস্থায় কীভাবে বন্যাদুর্গতরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে? এরই মাঝে সিলেট বোর্ডের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা মাত্র ৯ দিন পিছিয়েছে। আদৌ এই ৯ দিনে কি তাদের পুনর্বাসন সম্ভব? বাংলাদেশের এই বর্ষা মৌসুমে বারংবার বন্যা প্লাবিত হয় বিস্তর অঞ্চল। যদি পরীক্ষা চলাকালীন আবার বন্যা দেখা দেয়, তাহলে তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেট বিভাগের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে আগামী ৩০ জুন থেকে সারা দেশে এ পরীক্ষা শুরু হলেও সিলেট বিভাগে তা স্থগিত থাকছে।
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগ ছাড়া অন্য অঞ্চলের পরীক্ষা প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী ৩০ জুন থেকে শুরু হবে। ৯ জুলাই থেকে সিলেট বিভাগে পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষাগুলো হবে। স্থগিত পরীক্ষার সময়সূচি পরে জানানো হবে।
এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী ১১ আগস্ট লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা ১২ থেকে ২১ আগস্টের মধ্যে শেষ করতে হবে।