• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

চলে গেলেন ‘শিক্ষক বেশে বিপ্লবী’ প্রফেসর যোবদুল হক


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৪, ০১:২৭ এএম
চলে গেলেন ‘শিক্ষক বেশে বিপ্লবী’ প্রফেসর যোবদুল হক
প্রফেসর মো. যোবদুল হক। ছবি: সংবাদ প্রকাশ

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক, শিক্ষাবিদ প্রফেসর যোবদুল হক মৃত্যুবরণ করেছেন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

দুই দফায় করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তিনি ফুসফুস জনিত সংক্রমণে ভুগছিলেন। কয়েকদিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রামেকে ভর্তি করা হয়। সোমবার (১৫ জুলাই) তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

সন্ধ্যায় তার মরদেহ নিজ জন্মস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের নয়ালডাঙ্গা গ্রামে নেওয়া হয়। সেখানে পরিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে ও ছেলেসহ দেশে-বিদেশে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আশি-নব্বই দশকে সন্ত্রাস-মাস্তানবেষ্টিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মূর্তিমান আতঙ্ক আর পরীক্ষায় নকলবাজদের কাছে রীতিমত ত্রাস ছিলেন প্রফেসর যোবদুল হক। তার প্রশাসনিক দক্ষতা আর কঠোরতার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি নকল ও সন্ত্রাস বন্ধ করেছিলেন।  

প্রফেসর যোবদুল হকের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১০ নভেম্বর শিবগঞ্জের নয়ালডাঙ্গা গ্রামে। বাবা মো. যুবের আলী, মা মোছা. জুলেখা খাতুন। তবে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন নানীর বাড়িতে। দারুণ মেধাবী যোবদুল হক চুনাখালি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পান। স্থানীয় রানিহাটি হাইস্কুল থেকে ১৯৫৯ সালে অংকে লেটারসহ কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৬১ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষায় বৃত্তি পান। 
সেই সময়ে ঈশ্বরদীতে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনে বিজ্ঞানীদের অভাব বোধ থেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন বিজ্ঞানী হওয়ার। তবে প্রকৌশলীতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার পথে বিলম্ব হওয়ায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। ১৯৬৪ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রাজশাহী কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক সম্মান পরীক্ষায় প্রথম হন। পরের বছর এমএসসিতেও প্রথম শ্রেণি পান।

মাত্র ২২ বছর চার মাস বয়সে ১৯৬৬ সালে তিন ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়ে পদার্থবিদ্যায় শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর পিএসসির পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৬৭ সালে রংপুর সরকারি কারমাইকেল কলেজে যোগ দেন। একই বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সামার ফিজিকস ইনস্টিটিউটে অংশ নিয়ে লিখিত পরীক্ষা ও সার্বিক কর্মদক্ষতায় প্রথম হন। রাজশাহী কলেজ, সিলেট এমসি কলেজে শিক্ষকতা করেন।

যোবদুল হক মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ১৯৭৭ সালে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে উপাধ্যক্ষ হন। মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ ও নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী সরকারি আজিজুল হক কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে শৃঙ্খলা ফিরে আনেন। পরে তিনি মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) পদে এসে যোগ দেন ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

কিছুদিন ঢাকায় তীতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০০০ সাল অবধি রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। পরের বছর প্রতিষ্ঠানটি দেশসেরা হয়। প্রফেসর যোবদুল হক পুরস্কৃত হন শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে। সেখান থেকেই অবসরে যান। ২০০৩ সালে শিক্ষক দিবসে ‘জাতি গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা’ সম্মাননাপত্র পান। শিক্ষাজীবনে যেমন তিনি দ্বিতীয় হননি, তেমনি পেশাজীবনেও ছিলেন সময়ের অগ্রনায়ক, অদ্বিতীয়।

আশির দশকে প্রফেসর যোবদুল হক উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞানের প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র বই দুটি লেখেন। ২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার ‘শিক্ষকতায় সাড়ে তিন দশক আমার চ্যালেঞ্জ’ বইটি। মূলত তিনি শিক্ষকতায় ছিলেন সক্রেটিসের মতো। আর প্রশাসনে অনেকটাই বিপ্লবী। দেশের অসুস্থ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন। শিক্ষকতা ও শিক্ষাপ্রশাসন নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব ছিলেন।

Link copied!