• ঢাকা
  • বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩০, ১৩ শা'বান ১৪৪৬

ছাত্রদলের ‘লীগ ধর জবাই কর’ স্লোগানে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা


বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
ছাত্রদলের ‘লীগ ধর জবাই কর’ স্লোগানে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা
ছাত্রদলের মিছিল। ছবি : প্রতিনিধি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক প্রচারণায় বহিরাগত ছাত্রদলের মিছিল ও স্লোগান শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে।

গত বছরের ২৮ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলেও সরব বহিরাগত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। প্রশাসনরে অনুমতি না নিয়েই ক্যাম্পাসের চলছে তাদের শোডাউন।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দেড় শতাধিক ছাত্রদল নেতাকর্মীর একটি মিছিল ফার্স্ট গেট থেকে শুরু হয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে শোডাউন করতে দেখা যায়। পরে মিছিলটি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তন হয়ে আবার ফার্স্ট গেটের দিকে যেতে দেখা যায়। একই দিনে ছাত্রদলের আরেকটি গ্রুপ আব্দুল জব্বার মোড় থেকে মিছিল শুরু করে কেআর মার্কেট হয়ে ফার্স্ট গেটের দিকে অগ্রসর হয়।

এ ছাড়া সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আব্দুল জব্বার মোড়ে জড়ো হয়। পরে তারা ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংলগ্ন রাস্তা ধরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দিয়ে কেআর মার্কেটে গিয়ে মিছিল শেষ করে। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়, যার মধ্যে ‘একটা একটা লীগ ধরে ধরে জবাই কর’, ‘খালেদা  জিয়া, খালেদা জিয়া’ এবং ‘খুনি হাসিনার বিচার চাই’ ইত্যাদি। সম্পূর্ণ রাস্তা ডেকে মিছিলের কারণে সাময়িকভাবে যান চলাচল ব্যাহত হয়। এ ছাড়া অনেক শিক্ষার্থীকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে রাস্তার পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেও দেখা যায়।

এ মিছিলের বিষয় নিয়ে ছাত্রদলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টও দেওয়া হয়। ওই পোস্টে বলা হয়, গণহত্যা ও গণতন্ত্র ধ্বংসের দায়ে শেখ হাসিনার ফাঁসি ও তার দোসরদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের পূর্ব থানা আহ্বায়ক মো. রিপন মিয়া ও কোতোয়ালি থানার আহ্বায়ক মো. সোলেমান হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ মিছিল হয়। বাকৃবির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তান ও সাধারণ জনগণ বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করে।

এর আগে বিভিন্ন সময় বাকৃবি ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকবার বহিরাগতদের এমন মিছিলের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রথম বর্ষে হলে সিট পাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের মিছিল এবং প্রচারণায় অংশ নিতে হয়েছে। বহিরাগত ছাত্রদলের মিছিলে ছাত্রলীগ ধর জবাই কর স্লোগান শুনে অনেকটা আতঙ্কিত । এখন রাতে বের হতেও ভয় লাগছে, কখন কী হয়ে যায়! এই মিছিলে অনেকটা আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি।

আরেক শিক্ষার্থী জানান, বিএনপিকে চিন্তাভাবনায় আরও স্মার্ট হতে হবে।  বর্তমান প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ ধরে রাখতে পারেনি, কারণ তাদের পালস বুঝেনি। বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে আসামিকে ধরতেও পুলিশ প্রক্টরের অনুমতি ছাড়া ঢুকতে পারবে না। প্রভোস্টের অনুমতি ছাড়া হলের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে না। বাকৃবি ময়মনসিংহের গর্বের প্রতিষ্ঠান। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান, মাতৃসম বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বজায় রাখুন।”

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের পূর্ব থানা আহ্বায়ক মো. রিপন মিয়া বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পতিত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের বিচারের দাবিতে আমরা মিছিল করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি যথার্থ সম্মান রেখে ও শান্তিপূর্ণভাবে আমরা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। গণতান্ত্রিক দেশে মিছিল, মিটিং করা আমাদের অধিকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি না নিলেও আমরা আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে কর্মসূচি পালন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা যারা সাধারণ হিসেবে আছেন, তারা তো বিষয়টা স্বাভাবিক হিসেবে নেবে। কারণ এজন্যই তো তারা আন্দোলন করেছে এবং তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এই বর্তমান বাংলাদেশ। আমরাও তো ওই কাজটি করেছি। পতিত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের বিচারের জন্য আমরা কর্মসূচি পালন করেছি।”

প্রক্টর অধ্যাপক ড আব্দুল আলীম বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক মিছিল নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। গতকালের মিছিল নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। ওরা আজও মিছিল করতে চেয়েছিল কিন্তু করতে দেওয়া হয়নি। তাদের বলা হয়েছে এখানে রাজনীতি নিষিদ্ধ। ক্যাম্পাসে মিছিল করার জায়গা না। যদি করতে হয় বাহিরে করবে।”

প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, “আমরা তাদের চিহ্নিত করতে পারিনি। তবে আমাদের নিরাপত্তা টিম  সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় কাজ করছে।”

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর

Link copied!