রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রক্টর অফিস থেকে গত ৭ সেপ্টেম্বর র্যাগিংকে ‘সামাজিক অপরাধ’ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত কোনো শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্কও করা হয়।
তবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সতর্ক করার দুই সপ্তাহ পার না হতেই রাবিতে ঘটল র্যাগিংয়ের ঘটনা। প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের নামে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে। সিনিয়র দুই শিক্ষার্থী ভুক্তভোগীর মাকে শেষবারের মতো ফোন করতে বলেন। আর কোনোদিন দেখা নাও হতে পারে বলে জানাতে বলেন।
এ ঘটনায় সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাবির দর্শন বিভাগের (২০২৩-২৪) মোহাম্মদ রকি প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুরের লেবুবাগান এলাকার ‘বিশ্বাস ম্যানসন’ ছাত্রাবাসে।
অভিযুক্তরা হলেন, রাবির মার্কেটিং বিভাগের (সেশন ২০২২-২৩) নাজমুল হোসেন নাবিল এবং একই বিভাগের (সেশন ২০১৯-২০) অন্তর বিশ্বাস। ঘটনার শিকার রকি দাবি করেন, অভিযুক্ত নাবিল ও অন্তর তার কক্ষে ঢুকে তাকে অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর প্রশ্ন করতে শুরু করেন।
লিখিত অভিযোগে রকি বলেন, “আমি মোহাম্মদ রকি গতকাল (রোববার) রাত পৌঁনে ১২টা থেকে প্রায় দেড়টা পর্যন্ত মানসিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছি। ওই ছাত্রাবাসের ২০১ ও ২০৫ নম্বর রুমের দুই জন শিক্ষার্থী গতকাল রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে আমার কক্ষে আসেন। শুরুতেই তারা আমাকে নানা রকম বিব্রতকর প্রশ্ন করেন। ফলে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হই।”
লিখিত অভিযোগ রকি আরও বলেন, “কথাবার্তার একপর্যায়ে তারা আমাকে বলেন, তোকে হলের গেস্টরুমে নিয়ে যাব। গেস্টরুমে নিয়ে গিয়ে তোকে আদর আপ্যায়ন করব। শেষবারের মতো তোর মাকে কল দে, কল দিয়ে বলবি আর কোনো দিন দেখা নাও হতে পারে, আমি কোনো ভুল করলে আমাকে মাফ করে দিও।”
রকির অভিযোগ, “একপর্যায়ে তারা বলেন, আবরার ফাহাদ কে, কীভাবে মারা হয়েছিল, জানিস? আমি বলি, জি, ভাই পিটায়ে মারা হয়েছিল। তারপর তারা বলেন, তোকে এভাবে মারলে তখন কি করবি?’ তারপর আমি চুপ থাকি। এরপর তারা হুমকি দিয়ে বারবার আমাকে হলের গেস্টরুমে যেতে বলে। আমি যেতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে বলেন, তুই যদি হলের গেস্টরুমে যেতে না চাস তাহলে মেসে শিবির ডেকে নিয়ে এসে তোকে মারব।”
ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হলে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের ডেকে পাঠানো হয় প্রক্টর অফিসে। সেখানে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মশিহুর রহমানসহ দুই সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও নাসির উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
রাবি প্রক্টর মাহবুবুর রহমান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “একজন শিক্ষক হিসেবে আমরা এই বিষয়গুলোকে কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারি না। অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।”
প্রক্টর জানান, অভিযোগটি মার্কেটিং বিভাগের একাডেমিক কমিটির কাছে পাঠানো হবে। যা পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য রাবি শৃঙ্খলা কমিটির কাছে সুপারিশ জমা দেবে।
অভিযুক্ত নাবিল হয়রানি করেননি বলে দাবি করেন। অন্যদিকে অন্তর বিশ্বাস দাবি করেন রকির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেছেন। আবরার ফাহাদের প্রসঙ্গ নিয়ে অন্তর বলেন, আবরার ফাহাদকে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে। ক্যাম্পাসে যেভাবে র্যাগিং হতো সেভাবে হয় না।