‘গণঅভ্যুত্থানের চেতনায়– বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলুন’, ‘সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের বিপরীতে ছাত্র রাজনীতির আদর্শবাদী ও বিপ্লবী ধারাকে শক্তিশালী করুন’ এ স্লোগান দুটো সামনে রেখে দেশব্যাপী নতুন সদস্য সংগ্রহ আহ্বান করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। নভেম্বর-ডিসেম্বর ২ মাসব্যাপী সদস্য সংগ্রহ চলবে।
বুধবাব (৬ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী।
এ সময় সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রগতি বর্মন তমা, অর্থ সম্পাদক নওশীন মুশতারি সাথী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম, ঢাবি সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, সদস্য সায়মা আফরোজ, পঙ্কজ নাথ সূর্য উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ লড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বুলেটের সামনে আবু সাঈদসহ অসংখ্য ছাত্র- যুবকদের বুক পেতে দিতে দেখেছি। এ দেশের ইতিহাসে যে কোন দূর্যোগে, সংকটময় মুহূর্তে ছাত্র-যুবকরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তারা এগিয়ে গেছে, প্রাণ দিয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, “জাগ্রত ছাত্র সমাজের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ‘সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক, একই ধারার শিক্ষা’র স্লোগান নিয়ে ১৯৮৪ সালে ২১ জানুয়ারি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ সংগঠন ছাত্রদের সাথে নিয়ে সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক, একই ধারার শিক্ষার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বিগত সময়ে হাসিনা সরকার জ্ঞান-বিজ্ঞান-মনুষ্যত্ব ধ্বংসের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ চালু করে। একমাত্র ছাত্র সংগঠন হিসেবে এটি বাতিলের দাবিতে আমরা সারাদেশে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক- বুদ্ধিজীবীদের সংগঠিত করি। আন্দোলনের এক পর্যায়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার এটি বাতিলের ঘোষণা দেয়। অতীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ছাত্রস্বার্থ বিরোধী সমস্ত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো, আজও আছে। শিক্ষার বেসরকারীকরণ-বাণিজ্যিকীকরণ-সংকোচন এবং সাম্প্রদায়িকীকরণের বিরুদ্ধে লড়াই, ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত সহ গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মানের চেষ্টা, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন বিরোধী লড়াই, জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দাবিতে আমরা লড়ছি। এছাড়াও নারী নির্যাতন, সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলমান।”
শোষণের বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াই গড়ে তুলতে ছাত্রফ্রন্ট বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে বলা হয়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট শিক্ষা-সংস্কৃতি-মনুষ্যত্ব রক্ষার এই সর্বাত্মক লড়াইকে সারা দেশের ছাত্র সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায়। আমাদের এই লড়াইয়ের শক্তি বিদ্যসাগর, সুভাষ বসু, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, রোকেয়া, মাওলানা ভাসানী, শামসুজ্জোহা, শহীদ রুমী, আবু সাইদসহ অসংখ্য মানুষ–যারা অতীতে মানব জাতির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে সত্য, ন্যায় এবং সমাজপ্রগতির স্বার্থে সকল অন্যায়, অবিচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াই গড়ে তুলতে আমরা বদ্ধপরিকর।
শোষণ-বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজেকে শামিল করতে ছাত্র ফ্রন্টে যোগ দেওয়া আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, “সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রকৃত চেতনাকে ধারণ করে তাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চায়। এ লক্ষ্যে ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করতে চায়। সমস্ত অন্যায়-অত্যাচার- শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দূর্বার শক্তি গড়ে তুলতে চায়। অবক্ষয়ী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে নৈতিকতা- মনুষত্ববোধের ঝাণ্ডা ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে চায়। সারাদেশের ছাত্র-তরুণদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি–সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য হয়ে শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজেকে যুক্ত করুন! উন্নত আদর্শের ভিত্তিতে নিজের জীবন গড়ে তুলুন এবং শোষণ-বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজেকে শামিল করুন!”